ধর্মীয় নেতাদের অভিমত
ইসলাম, খ্রিস্টিয়ানিটি ও জুডাইজম—এই তিন ধর্মের নেতারাই এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এই তিন ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্য তাঁরা এই কর্মযজ্ঞে শামিল হয়েছেন।
ইহুদিদের ধর্মীয় নেতা টোভিয়া বেন কোরিন বলেন, এই কমপ্লেক্সটি নির্মাণের জন্য যে জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছে, তা ইহুদিদের কাছে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। এখানেই ইহুদি নির্যাতনের মূল পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এখন সে জায়গাটিই তিন ধর্মের মানুষকে ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করতে যাচ্ছে।
উদারপন্থী খ্রিষ্টান সম্প্রদায় প্রোটেস্ট্যান্টদের ধর্মীয় নেতা প্যাস্টর গ্রেজর হগবার্গও এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি বলেন, দ্বাদশ শতকে ঠিক এ জায়গাটিতে বার্লিনের প্রথম গির্জা সেন্ট পিটার্স চার্চ নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেড আর্মি বার্লিন মুক্ত করার সময় চার্চটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পূর্ব জার্মানির কর্তৃপক্ষ চার্চটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে। মাত্র ছয় বছর আগে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জায়গাটি খুঁড়ে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন বের করেন। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এখানে এমন একটি কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে যেখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। তিন ধর্মের লোকজন যার যার উপাসনা শেষে গলাগলি করে বাড়ি ফিরবে।
বার্লিনের মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা ও স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম কাদির স্যানচি বলেছেন, ‘হাউস অব ওয়ান’ তাঁর কাছে ধর্মীয় মেলবন্ধনের মতো মনে হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিশ্বকে দেখানো যাবে ইসলাম ধর্ম মোটেও অসহিষ্ণু নয়। এর মাধ্যমে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারবে।
নজির কী আছে?
অতীতে একই ভবনকে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা এবাদত ঘর বা উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহার করেছে—এমন নজির আছে; অবশ্য সচরাচর সেটা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে; একই সময়ে নয়। যেমন খ্রিষ্টানেরা দক্ষিণ স্পেন দখল করে নেওয়ার পর সেখানকার মসজিদগুলো গির্জায় পরিণত হয়। একইভাবে তুরস্কের গির্জাগুলো মসজিদে পরিণত হয়। ব্রিটেনের ওল্ডওয়েলসের ছোট ছোট গির্জা খ্রিষ্টানেরা স্থান পরিবর্তনের কারণে মসজিদ হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেনের প্রধান মসজিদটি অষ্টাদশ শতকে যাত্রা শুরু করেছিল গির্জা হিসেবে। সেখানে ইহুদি বসতি গড়ে ওঠার পর সেটি সিনাগগ হিসেবে ব্যবহূত হয়। তারও পরে সেখানে প্রধানত বাংলাদেশি মুসলমানদের বসতি গড়ে ওঠে। এই সিনাগগ তখন হয়ে যায় মসজিদ।
প্যাস্টর গ্রেজর হগবাগ বলেন, তিন উপাসনালয় ছাড়াও এখানে আলাদা একটি ভবন থাকবে। সেখানে নানা ধর্মের বইপুস্তক থাকবে। সেখানে আন্তধর্মীয় সংলাপ ও বিতর্ক হবে। এসব সংলাপে সব ধর্মের লোক অংশ নিতে পারবেন। এমনকি যাঁরা কোনো ধর্মমতে বিশ্বাস করেন না, তাঁরাও সেখানে শামিল হতে পারবেন।
প্যাস্টর বলেন, নানা ধর্মের সহাবস্থান সম্পর্কে নতুন দৃষ্টান্ত বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবে ‘দ্য হাউস অব ওয়ান’। তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগিরই নির্মাণকাজ শুরু হবে।