প্রচারণা শেষ। রাত পোহালেই ভোট। এবার নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টা আগেই প্রার্থীদের থেমে যেতে হয়েছে। যদিও পূর্বে এই সময়সীমা ছিল ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। দিনরাত বিরতিহীন সভা, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, মাইকিং শেষে এখন ভোটের হিসাব কষছেন প্রার্থীরা। আর জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় রয়েছেন ভোটাররা। কাকে ভোট দেবেন? কে কেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে? কে বিজয়ী হবে? বিজয়ী হলে এলাকার কি উন্নয়ন হবে? শান্তিপূর্ণ ভোট হবে তো? এ রকম নানা প্রশ্ন নিয়ে তাদের মধ্যে গবেষণা চলছে। তবে এবার ভোটের ফলাফল নির্ভর করছে বন্দরবাসীর ওপর। শহর-বন্দর নিয়ে গঠিত এ আসনের ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪০৫ জন ভোটারের মধ্যে বন্দরের ভোটার সংখ্যা প্রায় সোয়া ২ লাখ। ফলে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে বন্দরবাসী। এদিকে শেষ বেলায় এসে বিএনপির ভোটের একটি বড় অংশ প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে সেলিম ওসমানের দিকে। আরেক অংশ পরোক্ষভাবে এসএম আকরামকে সমর্থন দিচ্ছে। অবশ্য জেলা ও শহর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ওদিকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে নির্বাচনী এলাকা। সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোট বাক্সসহ নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের এমন প্রস্তুতি থাকলেও ভোটারদের শঙ্কা কাটছে না কিছুতেই।
বন্দর কলাগাছিয়া এলাকার ভোটার ও শহরের ব্যবসায়ী আনসার উদ্দিন জানান, সবাই-ই তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভাল ভাল কথা কইছে। কাকে ভোট দিমু বুঝতে পারছি না। তবে একদিন হাতে সময় আছে। যারে দিয়া এলাকার উন্নয়ন হইবো তারেই ভোট দিমু, এইটা কইতে পারি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি তো বছরের পর বছর ধইরা চইলা আইছে। এইটা বন্ধ হয়নি হইবোও না। এরমধ্য দিয়াই আমাগো বাস করতে হইবো। তয় এলাকার উন্নয়ন হইলে এগুলা একসময় কইমা যাইবো।
শহরের ২নং গেট এলাকার ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জানান, পরিবেশ শান্ত থাকলে ভোট দিতে যাবো। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবার দুই প্রার্থীকে দেখলাম, ভোট চাওয়ার চেয়ে বেশি তারা একজন আরেকজনকে নিয়ে নানা আজেবাজে কথা বলেছেন। আকরাম সাহেব তো তার প্রচারণায় ২০ ভাগ ভোট চেয়েছেন, আর ৮০ ভাগ সেলিম সাহেবের বিরুদ্ধে বলেছেন। সেলিম সাহেবও বলেছেন। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা এবার নানা হিসাব-নিকাশ করছেন, কাকে ভোট দেবেন। কারণ আকরাম সাহেবের শাসন একবার দেখেছেন। সেলিম সাহেবের দেখেননি। দু’জনই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন ভোটাররা চিন্তা-ভাবনা করে দেখবে, কাকে ভোট দেয়া যায়।
নিতাইগঞ্জ এলাকার ভোটার আজগর আলী জানান, আমরা শান্তি চাই। বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের একটা দাবি হলো শীতলক্ষ্যা সেতু। এই সেতু না হওয়াতে শহরের চেয়ে বন্দরবাসী অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই সেতুর ইস্যু মাথায় নিয়েই মানুষ এবার ভোট দেবে।
বেশ কয়েকজন ভোটারের তথ্যমতে, ১৩ই জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন থেকে ২৪শে জুন মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র ১০ দিনের বিরামহীন প্রচারণায় কাদা ছোড়াছুড়ি কম হয়নি। প্রচারণায়ও কেউ কাউকে ছাড় দেননি। তবে পাল্টপাল্টি বক্তব্য, বিবৃতিতে নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়ালেও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখন ভোটগ্রহণটা শান্তিপূর্ণ হলেই ভাল। চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত সেলিম ওসমান (লাঙ্গল) ও প্রথম দিকে নাগরিক ঐক্যের প্রার্থী হলেও পরবর্তীকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আকরাম (আনারস)। এই দু’জনের মধ্যে লড়াই হবে। বিভিন্ন এলাকাবাসীর তথ্য মতে, প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন সেলিম ওসমান। তার পরের অবস্থানে ছিলেন এসএম আকরাম। অপর দুই প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সমর্থিত শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (গামছা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুন সিরাজুল মজিদ (চিংড়ি মাছ) তারাও ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম তার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে শহর ও বন্দরে ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা করেছেন।
নিরাপত্তার চাদরে নির্বাচনী এলাকা
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে নির্বাচনী এলাকা। নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে ১ হাজার ৫৫০ জন পুলিশ, ৬০০ র্যাব ও ৩ প্লাটুন কোস্টগার্ড। এছাড়া ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। র্যাবের পৃথক ১৬টি মোবাইল টিম টহল দেবে। আপরাধীদের তাৎক্ষণিক সাজা দিতে ১০ জন নির্বাহী ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভোটগ্রহণের দিন সাধারণ কেন্দ্রে ২০ জন (পুলিশ ৬+আনসার ১৪) এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক ২১ (পুলিশ ৭+আনসার ১৬) জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। উপনির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ইসি। এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড, ৪টি আংশিক ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪০৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩১১ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪১টি এবং ভোটার কক্ষ ৬৭৪টি। নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির একেএম সেলিম ওসমান (নাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি এসএম আকরাম (আনারস), কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের শফিকুল ইসলাম (গামছা ও মোহাম্মদ মামুন সিরাজুল মজিদ (চিংড়ি মাছ)।