রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না-সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এমন আশ্বাস দেয়া হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। যথারীতি বেড়েছে সব পণ্যের দাম। রোজা শুরুর আগেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সরবরাহের সংকট আর আমদানিমূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে দাম বেড়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রোজার বাজার করতে শুক্রবার রাজধানীতে ক্রেতাদের ঢল নামে। ছুটির দিন থাকায় শনিবারও অনেকে সারছেন রমজানের বাজার। রোজার মাসে যেসব পণ্যের বেশি দরকার সেগুলোর সিংহভাগই ক্রেতারা শুক্রবার ও শনিবার কিনছেন। তবে বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা। সরকার ভোজ্যতেল ও চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তার তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১৫-২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।
এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে যে পাঁচ পণ্য বিক্রি শুরু করেছে তার খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর মধ্যে চিনির খুচরা মূল্য ৩৯, সয়াবিন (পেট বোতল) প্রতিলিটার ১০৭, মসুর ডাল ৬৫, ছোলা ৪৪ এবং খেজুরের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭০ টাকা কেজি। এছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন প্রতিকেজি গরুর মাংস ২৮০, মহিষের মাংস ২৫০, খাসির মাংস ৪৫০, ভেড়া ও ছাগির মাংস ৪০০ এবং বিদেশি গরুর মাংস ২৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে মাংস বিক্রেতারা সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া এ দামের তোয়াক্কাই করছেন না। এ মূল্যের সঙ্গে বাজারের মূল্যের বিস্তর তফাত।
খুচরা বাজারে এখনো প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১১৮ টাকায়। খোলা সয়াবিন ১১০-১১২, পামঅয়েল ৮৫-৯০, চিনি ৫০-৫২ এবং ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা কেজি। আর সবচেয়ে ভালো মানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা। এভাবে প্রতিটি পণ্য বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে। গতকাল প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৩০০, খাসির মাংস ৪৮০ টাকা। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। আগের দিন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল দাম বেড়ে হয় ১৭০ টাকা। তবে ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে প্রতিহালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকায়।
ছোলা, খেজুর, বেসন, বুটের ডাল, মসলা, পিঁয়াজ এবং মাছের বাজারের দিকে সরকার নজর না দেয়ায় এসব পণ্যের বিক্রেতারা সুযোগ মতো দাম বাড়িয়েছেন অস্বাভাবিক। বাজারে খেসারি ৬০-৬৫, অ্যাঙ্কর ৫০-৫৫, বোল্ডার ডাল ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খেসারির বেসন ৫৫-৭০ এবং বুটের বেসন ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুড় এবং মুড়ির দামও বেড়েছে অনেক। আখের গুড় ৮০-১০০ এবং মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। রমজানের কারণে সব ধরনের খেজুরের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে ক মানের বাংলা খেজুরের দামও এবার ১০০ টাকা। যা গত বছর মিলেছে ৬০-৭০ টাকায়। এছাড়া উন্নতমানের খেজুর মিলছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। আর মধ্যমমানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
মসলাজাতীয় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, কাঠবাদাম, কিশমিশ, চিনাবাদাম, জিরা, আদা, রসুন, পিঁয়াজসহ সব মসলাজাতীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে লবঙ্গের। এক হাজার ২০০ টাকার লবঙ্গ এখন বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। তাছাড়া জিরাতে ১০০, এলাচে ২৫০, কিশমিশে ৮০ টাকা দাম বেড়েছে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে।
বর্ষার সঙ্গে রোজা যুক্ত হওয়ায় কাঁচা সবজির দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচ ও বেগুনের। কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। এছাড়া আলুতে তিন টাকা দাম বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। বেগুন ৬০-৮০, পটোল ৩০-৪০, শসা ৩৫-৪০, টমেটো ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর পিঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। বাজারে এখন প্রতিকেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়।
রাজধানীর ধূপখোলা বাজারের ক্রেতা আজহার বলেন, “বাজারে এলে সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুর দামই নাগালের মধ্যে নেই। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে বাজারে এসে। তারপরও কিনতে হচ্ছে, কারণ সামনে রমজান মাস। আগে থেকে কিনে না রাখলে রোজা শুরুর পর আরো দাম বেড়ে যাবে।”
ব্যবসায়ীসসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয় গত সপ্তাহে। সে বৈঠকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল রমজানকে সামনে রেখে সরকার ও ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ ও অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু করবে এবং রমজানের আগে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন রোজায় কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু মন্ত্রীর সে কথা আর ঠিক থাকল না। প্রতি বছরের মতো এবারো রমজানে দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস উঠবে ক্রেতাসাধারণের।