ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হলেন সাকিব আল হাসান। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এ সময় বাইরে থাকতে হবে তাকে। এ ছাড়া দেশের বাইরেও আগামী দেড় বছর খেলতে পারবেন না এই তারকা। আচরণগত ত্রুটির কারণে সাকিবকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
এর ফলে অনুষ্ঠিতব্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেতে পারবেন না সাকিব। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও দলে থাকবেন না তিনি। একই সাথে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাইরের দেশে খেলার জন্য সাকিবের সব ধরনের অনাপত্তি পত্র বাতিল করেছে ক্রিকেট বোর্ড।
প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার সাকিবের আচরণগত ত্রুটি ধরা পড়েছে। শুধুমাত্র একটি কারণে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। বেশ কয়েকটি কারণে তাকে এই শাস্তি দেওয়া হলো। সাকিব দেশের অ্যাম্বাসেডর। তার কারণেই অনেক দেশ বাংলাদেশকে চিনে। সুতরাং তাকে আরো সতর্ক হতে হবে। সাকিবকে শাস্তি দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর ছিলো। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েছি। পরবর্তীতে এমন কাণ্ড ঘটালে আজীবন নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।”
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, “খেলোয়াড়দের আচরণগত ত্রুটি শুধু সাকিবের ক্ষেত্রে নয়, অনেকের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা এই ধারা বন্ধ করতে চাই। এখন কেউ কারো কথা শুনে না। এটি খুবই বাজে অবস্থা। সাকিবের আচরণ সরাসরি দলের অন্যদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করি আমরা। ভবিষ্যতে যে-ই আচরণগত ভুল করুক না কেনো, কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।”
সম্প্রতি ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি না নিয়েই সিপিএল খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন সাকিব। পথে লন্ডনে যাত্রাবিরতি দেন তিনি। সেখান থেকেই সাকিবকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয় বোর্ড। গতকাল দেশে ফিরে আসেন তিনি। এর মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশ ছাড়ার আগে কোচের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়ান সাকিব। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দিয়ে বসেন যে, সিপিএলে খেলতে না দিলে দেশের হয়ে ভবিষ্যতে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলবেন না। সাকিবের এমন আচরণে বিস্মিয় প্রকাশ করে ক্রিকেট বোর্ড।
ভবিষ্যতে কোনো খেলোয়াড় যাতে এ ধরনের আচরণ না করতে পারে তা নিশ্চিত করতেই সাকিবকে এমন শাস্তি দেওয়া হলো বলে মন্তব্য করেন পাপন। তিনি বলেন, “ক্রিকেট বা অন্য যে কোনো খেলায় শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আশা করি সাকিবের পরিণতি অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে টিভি ক্যামেরার সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে সমালোচিত হন সাকিব। এমনকি ওই কারণে তাকে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ভারতের সাথে তিন ম্যাচের সিরিজের সময়ও ড্রেসিংরুম থেকে বের হয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেন তিনি। পরে খেলার সময় ড্রেসিংরুম থেকে বের হওয়া যাবে কিনা তা জানেন না বলে আরো বিতর্ক ছড়ান তিনি। এ সব কিছু মিলিত রূপই বিসিবিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে বলে জানান বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
আগামী ছয় মাস কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে খেলতে পারবেন না সাকিব। দেড় বছর খেলতে পারবেন না দেশের বাইরে কোনো রকম আয়োজনে। এ সময়টা জাতীয় দলের কোচ চাইলে দলের সাথে থাকতে পারবেন তিনি। এ সময় চুক্তির অর্ধেক বেতন পরিশোধ করা হবে সাকিবকে।
সাকিবের এই ঘটনায় খেলোয়াড়দের বিজ্ঞাপন করা নিয়েও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। বিসিবির সাথে চুক্তিবদ্ধ কোনো ক্রিকেটার এখন থেকে বিসিবির অনুমতি ছাড়া বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিসিবির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কোনো রকম আপিলের সুযোগ পাবেন কিনা তা এখনো জানা যায়নি।