মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে নেতাকর্মীরা এসেক্সের সিটি প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর এক পর্যায়ে চেয়ার সঙ্কট নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়।
ইফতার পূর্ব আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন তারেক রহমান।
তিনি সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা জানানোর পরেও পিছন দিকে হৈ-হল্লা চলতে থাকলে তারেক বলেন, “এই যে আমার ডান পাশে, হয় মাইকটা আপনারা ধরেন, নইলে মাইক আমার কাছে থাকলে আপনাদের চুপ করতে হবে।”
এর কিছুক্ষণ পর একজন এসে তারেককে মাইক হাতে নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর দৃশ্যত বিরক্ত তারেক মাইক হাতে নিয়ে দেশের উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে নিজের ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা বলতে শুরু করেন।
লিখিত বক্তব্য পড়ার সময় কিছু সময় পরপরই হট্টগোলের কারণে থেমে যেতে হয় তারেককে। একাধিকবার তিনি কর্মীদের থামাতে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
শ্রোতাদের মনোযোগ টানতে মাঝে মধ্যে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলেন তারেক। এর জবাব আসছিল ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ দিয়ে। একটি প্রশ্নের পর সবাই ‘না’ উত্তর দিলে তারেক জানতে চান, ‘না’ কেন।
এ সময় সবাই চুপ করে থাকলে বিরক্ত তারেক বলেন, “সবাই শুধু ইনটেলিজেন্ট মোবাইল ফোন নিয়ে ছবি তোলাতে ব্যস্ত।”
সাদা শার্টের উপর কালো কোট পরে আসা তারেক নেতাকর্মীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বলেন, “ইফতারের সাথে সাথে আইটেমের সাথে সাথে একটু বক্তব্যের দিকেও মনোযোগ দিন, কারণ আমরা দেশ নিয়ে কথা বলছি।”
কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে গিয়ে তারেক বলেন, “দেশটি আমাদের সকলের, কারো বাবার সম্পত্তি নয়। সুতরাং এই দেশের উন্নয়নে সকলকেই কাজ করতে হবে।”
মিনিট দশেক বক্তব্য দেয়ার পরও কর্মীরা শান্ত না হওয়ায় পাশে দাঁড়ানো একজনকে তারেক বলেন, “এদেরকে চুপ করতে বল। আর কথা বললে চলে যেতে বল, কথা যদি না শোনে।”
বক্তব্যের শুরুর দিকে বোখারী শরিফের একটি হাদিস তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “তোমাদের কেউ সিয়ামের দিন যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল ও চেঁচামেচি না করে। কেউ তাকে গালমন্দ করলে বা তার সাথে ঝগড়া করলে সে শুধু বলবে, আমি সিয়াম পালনকারী।”
দেশের উন্নয়নে সবার আগে কৃষি খাতের সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক বলেন, “একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দুই দশকের বেশি সময়ের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে আমার নিজেরও চিন্তা, চেতনা এবং কর্মকাণ্ড জুড়ে রয়েছে- একটি সমৃদ্ধশালী ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। বিশ্ব মানচিত্রে যার পরিচয় হবে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শিল্পায়নে স্বার্থক, অর্থনীতিতে গতিশীল, মানব সম্পদে ঐশ্বর্যমণ্ডিত, সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে।”
তবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তারেক রহমান।
‘উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির প্রতি নিবেদিত সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত একটি সরকারের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হলেই’ দেশের কাঙিক্ষত উন্নয়ন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তারেক বলেন, “সরকার পাবলিক পরীক্ষাগুলোর আগের রাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে জিপিএ ফাইভের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দেশীয় মেধার মানদণ্ডকে শুধু নষ্টই করছে না, আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে হাসির পাত্রে পরিণত করেছে।”
শিক্ষা সংস্কার নিয়ে নিজের ভাবনার কথা বলতে বলতেই থেমে গিয়ে দর্শক সারির দিকে তাকিয়ে থাকেন হতাশ তারেক।
এরপর পাশের একজনের কাছে তিনি জানতে চান কয়টা বাজে। পাশ থেকে কেউ একজন বলেন, স্যার সাড়ে ৮টা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করেন তিনি।
ইফতার অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের অনেককে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। নেতাকর্মীদের অনেকেই ইফতার, এমনকি রোজা ভাঙার জন্য পানি না পাওয়ার কথাও জানান।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠান মঞ্চে তারেক রহমান ছাড়াও দলের যুক্তরাজ্য শাখার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট আখতার হোসেন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন জাহিদ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মুকিত খানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।