বাক্যে যার মুক্ত ঝরে। যার লেখা পড়লে হারিয়ে যাই অন্য এক দিগন্তে। হ্যা, আমি কিংবদন্তি লেখক ‘হুমায়ূন আহমেদ’ –এর কথা বলছি। যার উপন্যাসে সৃষ্টি চরিত্রকে অনুসরণ করে বাস্তবেই একা একা ঘুরে বেড়াই পথে-প্রান্তরে। তার বই পড়তে পড়তে হয়তো হঠাৎ করে প্রবল উন্মাদনায় বলে ওঠি_ ইস! যদি হিমু হতে পারতাম! হয়তো নিজেকে তখন হিমুই ভাবতে শুরু করি।
কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের কথা মনে আছে কি আমাদের যার পরিণতি কী হতে পারে এ আশঙ্কায় রাজপথে মিছিল হয়েছে, তার হাতে জন্ম হয়েছে একেকটি শক্তিশালী অভিনেতা-অভিনেত্রী। আর তিনি এমন এক লেখক যার সৃষ্টি হিমু সিরিজ, মিসির আলীসহ বিভিন্ন বই কিনতে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। আমাদের অনেকেই তাকে না চিনেও অভিমান করে থাকতেন দিনের পর দিন। সহজ কথার জাদুতে আমাদেরকে আবিষ্ট করে হুমায়ূন আহমেদ এমনই এক ভাষার প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন যে_ সহজ সমীকরণের মধ্য দিয়ে সহজকেই অতিক্রম করে এক আশ্চর্য বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হতো আমাদের সবাইকে।
যে সঙ্কট, অনুভূতি, বেদনা হয়তো জীবনেরই কোথাও তলিয়ে গিয়েছিল। যে বোধে হয়তো প্রেরণা থাকলে বাঁচার আনন্দ আরো বেশি হয়। যে বেদনার পরিচর্যা করলে আমরা যেন আরো বেশি মানুষ হয়ে উঠি; এরকম অসংখ্য কাজ তিনি দক্ষ শিল্পীর মতোই ফুটিয়ে তুলেছেন ক্যানভাসের পরতে পরতে।
কী ছিলেন না তিনি! নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক, কথাসাহিত্যিক, আড্ডাবাজসহ কতকিছু! কিন্তু একটা সময় আমাদের সবাইকে চলেই যেতে হয় ফিরে আসার পথ বন্ধ হওয়া সেই স্থায়ী জীবনে। লেখক হুমায়ূন আহমেদও জীবনের সব লীলা সাঙ্গ করে আজ থেকে দুই বছর আগে এই দিনে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
আজ হয়তো তিনি সবার কাছে এক স্মৃতির নাম। কিন্তু তার সৃষ্টি তিনি রেখে গেছেন এই ইহলোকে, হয়তো এর মাধ্যমেই বারবার ফিরে আসবেন এদেশের কোটি ভক্তর হৃদয়ে। ফিরে আসবেন হয়তো হলুদ পাঞ্জাবি পরে হিমু হতে চাওয়া কোনো কিশোরের মননে। কালো ফ্রেমের চশমা পরা কোনো বৃদ্ধও হয়তো হুমায়ূনের লেখনীকে ভর করে ফিরে যাবে ফেলে আসা কোনো পড়ন্ত বিকালের আলোয়।
ব্যক্তি হুমায়ূন হয়তো একদিন স্নান হয়ে যাবেন। তবু তার লেখার ভেতরেই তিনি জলছাপ হয়ে আবারো উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবেন প্রাণের বিষণ্ন কোনো অনুভূতির চরাচরে, হয়তো সেদিনও কন্যা সুন্দর আলোয় সাজবে আবার আকাশ। তার রেখে যাওয়া সৃষ্টির এ অর্থবহ প্রেরণায়ই আবারো হয়তো জেগে উঠবে নগর, বন্দর, গ্রাম কিংবা ঘন জঙ্গলের নিঃসঙ্গ চাঁদ। রাতভোর হলে হয়তো নামবে বৃষ্টি নামবে আবারো। এরকম অজস্র অনুভূতির মধ্য দিয়েই তিনি ফিরে আসবেন বারবার পাঠকের মনে, এ বেদনালোকে। আজ তাঁর ২য় মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জানাই।