ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার রেল ক্রসিংয়ে শুক্রবার ভোরে একটি বরযাত্রীবাহি বাসের সাথে ট্রেনের সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন। নিহতদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি কাজাীপাড়া গ্রামের সুধির কুমার (৪০), বিপ্লব (২৫), শোভন কুমার (২), কৌশিক (৮), সুজয় (৩০), কৃষ্ণা (৩০), বন্যা (৩৫), সঞ্জয় (৩৪) ও সঞ্জিত কুমার (৩২)। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও বাকীদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত বাসযাত্রীরা জানান, তারা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি কাজীপাড়া গ্রাম থেকে সনাতন ধর্মের একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হিসেবে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সাঁকো মথনপুর গ্রামে যান। ফেরার পথে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে দুর্ঘটনা কবলিত হন। এ ঘটনার পর থেকে  খুলনার সাথে ঢাকা-রাজশাহীগামী সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুলনা থেকে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩ টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার সাকো মথনপুর গ্রামের সুবল বিশ্বাসের মেয়ের বিয়ে শেষে রবযাত্রীবাহী বাস বারবাজার রেল লাইন ক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময়  দিনাজপুরের সৈয়দপুর থেকে খুলনা গামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দুুরে নিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই একই পরিবারে ৩ জনসহ ৯ জন নিহত হয়। ফরিদপুর যাওয়ার পথে মৃত্যু বরণ করেন সঞ্জিত নামে এক বরযাত্রী। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, যশোর, কোটচাদপুর ও কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে। কোটচাদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৯ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজনের লাশ ফরিদপুর থেকে ঝিনাইদহে আনা হচ্ছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৪০ জনকে। তাদের যশোর, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছ্।ে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে উদ্ধার কর্মীরা জানান। 
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান জানান, উদ্ধারকৃত লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান,  দুর্ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও জানান, খুলনা থেকে রিলিফ ট্রেন এসে রেল লাইন লাইনের উপর পরে থাকা বাস উদ্ধার করতে এখনো দুই ঘন্টা সময় লগতে পারে। তারপর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে। বারবাজারের বাসিন্দা আজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, রেল ক্রসিংয়ে ২ জন গেটম্যান মমিন ও হুমায়নের ডিউটি ছিল। কিন্তু  শুক্রবার দুর্ঘটনার সময় তারা সেখানে ডিউতিরত ছিলেন না। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ও রেলের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।