চলতি আগস্টসহ তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের চার মাসের বেতনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে দাবি আদায়ের জন্য রাজধানীর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সামনে সড়কের এক পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল করেন শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা হয়
। ট্রেড ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ১০টি সংগঠনের এই সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শ্রমিকদের চার মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে সারা দেশে সরকারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বিজিএমইএ শ্রমিকদের গণহত্যার পরিকল্পনা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ন্যায্য পাওনার জন্য ১৬০০ শ্রমিক আজ ৬ দিন ধরে অনশন করছেন। তারা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। গাজায় যেভাবে গণহত্যা চলছে এটি সেই গণহত্যার শামিল। যদি শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, যদি শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে মালিকপক্ষ পালিয়ে যায় তাহলে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ রয়েছে। বিজিএমইএ না পারলে সরকার রয়েছে। কিন্তু বিজিএমইএ এবং সরকার কি করলো? ঈদসহ আজ ছয় দিন শ্রমিকরা না খেয়ে আছেন। কিন্তু তারা কেউ শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াননি। সারা দেশের মানুষকে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই আন্দোলন শুধু তোবা গ্রুপের ১৬০০ শ্রমিকের না, এটি ১৬ কোটি মানুষের আন্দোলন। প্রয়োজনে সারা দেশের শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসবেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, সুশীল সমাজসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। মান্না বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন- ৪০০০ কোটি টাকা কোন টাকাই না। তাহলে তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের এই চার কোটি টাকা তো কিছুই না। তাহলে কেন তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মালিকরা মুনাফার জন্য মিথ্যাচার করছে। মাত্র চার কোটি টাকা মালিকদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না এটা ঠিক না। তোবার শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের জন্য দেশব্যাপী আন্দোলনে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ব্যাংক খোলা থাকলে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। কোন ধরনের ছলচাতুরি সহ্য করা হবে না। শ্রমিকদের ভুখা রেখে, শ্রমিকদের শ্রমের টাকায় যারা ঈদ উদযাপন করেছেন সেই শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমরা শ্রমিকদের পাশে আছি, থাকবো। তোবা গ্রুপের শ্রমিক মুহাম্মদ মিরাজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সুধাংশু চক্রবর্তী, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, তোবা গ্রুপের শ্রমিক পারুল বেগম। সমাবেশে শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে যান খুশি কবির, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সহসভাপতি রুবিনা আক্তার আশা, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতা মোফাজ্জল হোসেন, জলি তালুকদার, শবনম সাদেকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে রামপুরার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। তখন তিন জন শ্রমিক আহত হন বলে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। সমাবেশ শুরুর আগে হোসেন মার্কেটের সামনে সড়ক অবরোধ করতে মিছিল নিয়ে সড়কে নামে শ্রমিকরা। কিন্তু পুলিশের বাধায় তারা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন। এতে সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশ শুরুর আগ থেকেই জলকামানের গাড়ি নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয় হোসেন মার্কেটের সামনে। সমাবেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তোবা গ্রুপের বেশির ভাগ শ্রমিক অনশনে অসুস্থতার কারণে হোসেন সুপার মার্কেটে তোবা গ্রুপের অফিসেই অবস্থান নেন তারা। দুই ঘণ্টার এই সমাবেশে অন্যান্য দাবির পাশাপাশি তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ওই গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনের ফাঁসি দাবি করেন শ্রমিকরা। এদিকে, অনশন করতে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়েছেন।