বিশ্বকাপে খেলা ইরান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ান গেমসে খেলবে। তার সঙ্গে রয়েছে শক্তিশালী কাতার, কুয়েত, ইরাক, লিবিয়া, বাহরাইন, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আরব। বড় ধরনের অঘটন না ঘটলে স্বর্ণ জেতা লড়াই এদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এমন শক্তিশালী দেশ যেখানে আছে সেখানে বাংলাদেশও অংশ নিচ্ছে। টার্গেট কী হতে পারে এ প্রশ্ন উঠলে অনেকে আবার বলতে পারেন, বাঘ-সিংহের সঙ্গে আবার টার্গেট কী? ফুটবল দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন, অতীতে এশিয়ান গেমসে যাই হোক না কেন বাংলাদেশ এবার ভালো করবে। বাবু নিঃসন্দেহে একজন দক্ষ সংগঠক। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানে এক যুগের বেশি সময় ধরে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন ছাড়াও জাতীয় দলের বেশ কয়বার এই দায়িত্বে ছিলেন। সুতরাং সংগঠক হিসেবে তার মেধা নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনি যে বলেছেন, অতীতের চেয়ে এশিয়ান গেমসে দল ভালো খেলবে তা কিসের ভিত্তিতে। যদি তিনি ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে এ কথা বলে থাকেন তাহলে ভিন্ন কথা।প্রশ্ন হচ্ছে দেশের ফুটবলের মান কি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে, যে কারণে তিনি ভালো খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ান গেমসের পর্দা উঠবে। সুতরাং হাতে একেবারে সময় নেই বললেই চলে। পর্দা উঠবে ১৯ তারিখে কিন্তু ফুটবল ইভেন্ট শুরু হয়ে যাবে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকেই। প্রস্তুতি হিসেবে প্রাথমিকভাবে ২৫ জনকে ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে আবার জণ্ডিসে আক্রান্ত হওয়ায় মিঠুনের মতো নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের এশিয়ান গেমস খেলা শেষই হয়ে গেছে। তা ছাড়া চাচার মৃত্যুতে মামুনুল ইসলাম মামুন গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে উপস্থিত হতে পারেননি। প্রথমিক দলে আরও নতুনভাবে চার খেলোয়াড়কে ডাকা হয়েছে। তারা হলেন ব্রাদার্সের মেজবা, মালেক, চট্টগ্রাম আবাহনীর ফাহাদ ও টিম বিজেএমসির সজিব। ডাচ কোচ লোডডিক ক্রুইফ শনিবার ঢাকা আসার পর রবিবার ২৫ জন খেলোয়াড় ভাগাভাগি করে এক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলান। ম্যাচ খেলেই পুরো দল সন্ধ্যায় বিকেএসপি গেছে। সেখানে এক মাস সাত দিন ক্যাম্প চলবে। কথা হচ্ছে মাত্র ৩৭ দিনেই এশিয়ান গেমসে কি ফলাফল আশা করা যায়। স্বর্ণ জিততে উন্নত দেশগুলো কি প্রস্তুতি নিচ্ছে তা জানা নেই। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও আফগানিস্তান অনেক আগে থেকেই এশিয়াডের অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশে লিগ চললে অনুশীলন বন্ধ থাকে। ভারত কিন্তু থেমে থাকে না। মালদ্বীপও সমানতালে প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন খেলোয়াড়দের সাহস দিয়ে বলেছেন, তোমাদের বয়স কম, আমার বিশ্বাস কোরিয়ায় তোমরা ভালো করবে। সালাউদ্দিনকে ধন্যবাদ দিতে হয়, তবুও তো তিনি ক্যাম্প শুরুর আগে খেলোয়াড়দের সাহস জুগিয়েছেন। আগে তো ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে সভাপতিরা ক্যাম্পেই আসতেন না। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা! তারা এখনো ঠিক হয়নি। বাবুই বলেছেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে গ্র“পিং নির্ধারণ হবে। সালাউদ্দিন সাহস জুগিয়েছেন। বাবুও বলছেন দল আগের চেয়ে ভালো করবে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব। ৩৭ দিনে ভালো প্রশিক্ষণ করা যায় না তাও বলা যাবে না। কিন্তু ক্লান্ত শরীরে খেলোয়াড়রা গরমে ক্যাম্পে কুলিয়ে উঠতে পারবে কি-না। দীর্ঘদিন লিগে ব্যস্ত ছিল, প্রচুর দম খরচ হয়েছে এখানে। আর ক্রুইফ চ্যালেঞ্জ ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে যে কঠিন অনুশীলন করিয়েছিলেন তা যদি এবারও অব্যাহত থাকে তাহলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাফুফে সভাপতির সঙ্গে সন্তোষজনক আলোচনা করেই ক্রুইফ প্রস্তুতিতে বসেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে তার, এখনো বিশাল অঙ্কের বেতন বাকি। প্রফেশনাল কোচরা এমনিতেই অর্থ ছাড়া কিছুই বুঝেন না। এ অবস্থায় তিনি এশিয়ান গেমস ক্যাম্পে খেলোয়াড়দের অনুশীলনের ব্যাপারে কতটা মনোযোগী হবেন সেটাও দেখার বিষয়। অর্থাৎ এ অবস্থায় এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ভালো খেলবে- তা ভাবাটা সত্যিই কঠিন।