বরযাত্রীবাহী বাসের সাথে ট্রেনের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের তিন সদস্য রয়েছেন।
শুক্রবার ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে আট ঘণ্টা খুলনার সাথে ঢাকা ও রাজশাহীর সব ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সংঘর্ষের পর সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাসটিকে ঠেলে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। তাদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর-কনে আলাদা একটি মাইক্রোবাসে থাকায় রক্ষা পান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বরযাত্রীর ওই বাসটি কালীগঞ্জের সাকো মথুনপুর থেকে শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামে যাচ্ছিল। বারোবাজার রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ওই রেলক্রসিংয়ে মমিনুর রহমান ও হুমায়ুন কবির নামের দুজন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করেন। ঘটনার সময় তারা সেখানে ছিলেন না। গেট বন্ধ না করায় বাসটি রেললাইনের ওপর ওঠে। এতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন সুধীর কুমার (৪০), বিপ্লব বিশ্বাস (২৫), সুবল কুমার (২২), কৌশিক কুমার (৮), সুজয় বিশ্বাস (৩০), কৃষ্ণা রানী (৩০), বন্যা বিশ্বাস ( ৩৫), সঞ্জয় বিশ্বাস (৩৪) ও উজ্জ্বল। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, বারোবাজার রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী ওই ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় বাসটি ট্রেন লাইনের ওপর আড়াআড়িভাবে পড়ে যায়। এ অবস্থাতেই বাসটিকে ঠেলে নিয়ে ট্রেনটি চলতে থাকে। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে ট্রেনটি থামে। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, যশোর, কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন।উদ্ধারকর্মীরা লাশ খুঁজছেন।
কোটচাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নয়জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা ৪০ জনকে যশোর, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফরিদপুর যাওয়ার পথে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। আহত আরেকজন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে পারে।
ট্রেনের যাত্রী ঢাকার গাজীপুরের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, হঠাৎ জোরে একটা শব্দ শুনতে পান। এরপর মানুষের চিত্কার শুনেছেন। ট্রেনটি থামার পর নিচে নেমে দেখতে পান ট্রেনের মুখে বাস আর নিচে মানুষের লাশ।
এ ঘটনার পর ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান, তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।