মা তো মা-ই। হোক সে যতই হিংস্র। সদ্য জন্ম নেওয়া নিজের শিশু সন্তানের মুখ দেখতে কোন মায়ের না ভালো লাগে? তাইতো সুন্দরবনে মা হওয়ার স্বাদ নিয়েছেন দুই মাদি কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল। তাও আবার একটি কিংবা দুটি নয়, ৭১টি।
সুন্দরবন করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্র থেকে সোমবারপরিবর্তনকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা যায়, বাচ্চাগুলোকে বর্তমানে পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রের লালন-পালন অংশে ছেড়ে দেওয়া হবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল গত ১০ মে প্রজননকেন্দ্রে যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৮টি ডিম দেয়। সুন্দরবন করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্রের কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের ফুটানো ডিম থেকে ৭১টি বাচ্চার জন্ম হয়েছে।
ডিমগুলো এরপর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আ. রবের তত্ত্বাবধানে টানা ৯১ দিন কেন্দ্রের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে সঠিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও আলোর ব্যবস্থা এবং পানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে এ রকম পরিবেশে রাখা হয়।
সেখানে ওই ডিম থেকে রোববার সকালে ৭১টি বাচ্চা ফুটে বের হয়। ভ্রূণের মৃত্যু ও অনিষিক্ত হওয়ার কারণে এবার ২১টি ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে ফুটানো বাচ্চার ৮০ শতাংশ নারী ও ২০ শতাংশ পুরুষ কুমির।
বিলুপ্তপ্রায় লবণপানি প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন (জীববৈচিত্র) প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকায় আট একর জায়গার ওপর বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজনন কেন্দ্র।
শুরুতেই জেলেদের জালে আটক ছোট ও বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রে মিঠাপানির দুটি নারী কুমির, লবণপানির দুটি নারী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও রয়েছে।
২০০৫ সাল থেকে গত নয় বছরে জুলিয়েট ও পিলপিল থেকে কেন্দ্রে (বর্তমান বছরের বাচ্চাসহ) মোট ৫৭৪টি ডিম থেকে ৩৫৬টি বাচ্চা হয়েছে।
প্রজননকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কুমির বিশেষজ্ঞ আ. রব বলেন, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল।
লবণপানির কুমির, মিঠাপানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠাপানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু লবণপানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে।
এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে আর ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
প্রজননকেন্দ্রের সমস্যা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আ. রব বলেন, “বাচ্চা ফুটানোর জন্য প্রতিবছরই নতুন যন্ত্রপাতি লাগে। নতুন করে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলে শতভাগ বাচ্চা ফুটানো সম্ভব। এ ছাড়া কুমিরের চরম খাদ্যাভাব রয়েছে। বন বিভাগ থেকে পাওয়া বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারপর কুমিরের ওষুধ ও চিকিৎসা বাবদ কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দের কথা বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো ফল মেলেনি।”
সরকার এ প্রজননকেন্দ্রকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে অবশ্যই এসব খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ছাড়া গত আইলার জলোচ্ছ্বাসে কুমির ভেসে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি সরকারের কাছে অবকাঠামোগত উন্নয়নেরও দাবি জানান।