দু’দশকের ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে মাহেলা জয়বর্ধনের চোখ ধাঁধানো ইনিংসের অভাব নেই। শ্রীলঙ্কার এ বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানের ঝুলিতে ১১৭৫৬ টেস্ট রান। সোয়াশ’ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ক্যারিয়ারে ১০০০০ রানের কৃতিত্ব মাহেলা ছাড়া কেবল ১০ জন ব্যাটসম্যানের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অসাধারণ এক ইনিংসে দেখান ট্রিপল সেঞ্চুরিও। দলের বিপর্যয় মুহূর্তে ব্যাট হাতে কাণ্ডারির ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে অসংখ্যবার। মাহেলার ক্যারিয়ারের অনন্য ইনিংসগুলো ফিরে দেখা যাক:
১৬৭ (নিউজিল্যান্ড, গল ১৯৯৮)
স্কুল ক্রিকেটের হিরো মাহেলা জয়াবর্ধনে শ্রীলঙ্কার হয়ে নায়কোচিত প্রথম নৈপুণ্যটা দেখান ক্যারিয়ারের মাত্র চতুর্থ টেস্টে। ১৯৯৮’র সিরিজে নিজ মাটিতে এতে নিউজিল্যান্ডকে মোকাবিলা করছিল লঙ্কানরা। গলে ওই টেস্টে দু’দলের ব্যাটিং নৈপুণ্যটা ছিল ধকলের। প্রথম দফা ব্যাটিংয়ে মাহেলা ছাড়া শ্রীলঙ্কা দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি ছিল ৩৬ রানের। আর নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ৫৩। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখান মাহেলা। স্পিন সহায়ক পিচে কিউই বোলার ড্যানিয়েল ভেট্টরি সামনে দলের বাকিরা কুপোকাত হলেও দারুণ কভার ড্রাইভ, লেট কাট খেলে জয়াবর্ধনে দেখান ব্যাটে অন্য দ্যুতি। ১৬৭ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন মাহেলা। পরের টেস্ট ড্রতে শ্রীলঙ্কা সিরিজ জিতে নেয় ১-০তে।
১১৯ (ইংল্যান্ড, লর্ডস ২০০৬)
২০০৬-এর ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে স্বাগতিকদের ৫৫১ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস থমকে পরে ১৯২ রানে। মাহেলা করেন ৬১ রান। আর দ্বিতীয় ইনিংসে মাহেলা ক্রিজে একাধারে দেখান ধৈর্য ও বাহারী শটের প্রদর্শনী। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষ বিকালে ব্যাট হাতে ক্রিজে যান জয়াবর্ধনে। ইংলিশ পেসার ম্যাথিউ হোগার্ড, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, সাজিদ মাহমুদদের পেস ঝড় সামলে পরে মাহেলা লর্ডসের ক্রিজে কাটিয়ে দেন চতুর্থ দিনের পুরোটা। ম্যাচের শেষ দিন নিজের উইকেট দিলেও জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরি ম্যাচ বাঁচে শ্রীলঙ্কার।
৩৭৪ (দ.আফ্রিকা, সিংহলিজ ২০০৬)
সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে চস জিতে আগে ব্যাটিং নেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। কিন্তু ১৬৯ রানেই থুবড়ে পড়ে প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংস। জবাবে ব্যাট হাতে নড়বড়ে সূচনা দেখাচ্ছিলেন স্বাগতিক লঙ্কান তারকারাও। ইনিংসের শুরতে নিজের প্রথম দুই ওভারে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যানের উইকেট উপরে নেন প্রোটিয়া পেসার ডেল স্টেইন। কিন্তু ম্যাচটি ছিল জয়াবর্ধনেরই। টান সাত সেশন ব্যাটিংয়ে জয়াবর্ধনের ব্যাটের তাণ্ডবে একের পর এক বাউন্ডারি খান স্টেইন, মাখায়া এনটিনি আন্দ্রে নেলরা। জয়াবর্ধনে করেন ৩৭৪ রান। এতে তার স্ট্রাইক রেট ৬৫.০০। শ্রীলঙ্কা এতে জয় পায় ইনিংস ব্যবধানে।
১২৩ (দ.আফ্রিকা, পি সারা ওভাল ২০০৬)
মাত্র আগের সপ্তাহে দেখিয়েছেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। এজন্য পি সারা ওভাল ম্যাচে ভক্তদের আলাদা দৃষ্টি ছিল জয়াবর্ধনের দিকে। আর জয়াবর্ধনে এবারও দেখালেন ঝলমলে নৈপুণ্য। আর প্রতিকূল অবস্থা থেকে ঘুড়ে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতে নিল একাধিক রেকর্ড গড়ে। শেষ ইনিংসে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার সামনে ৩৫২ রানের টার্গেট দেয় সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শেষ ইনিংসে এত রানের টার্গেটে জয়ের ঘটনা দেখা যায়নি তার আগে একবারও। আর টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে এতবড় টার্গেটে তখনও জয় দেখেনি শ্রীলঙ্কা। তবে স্টেইন, এনটিনি, শন পোলকদের পেস আক্রমণ সামলে মাহেলা জয়াবর্ধনে হাঁকান ম্যাচজয়ী সেঞ্চুরি।
১৮০ (ইংল্যান্ড, গল ২০১২)
গল টেস্টে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়াবর্ধনের এ ইনিংসটি আলাদা দ্যুতির। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা ৩০ রানের কোঠা পার করতে ব্যর্থ হন প্রত্যেকেই। আর মাহেলা খেলেন ১৮০ রানের অসাধারণ ইনিংস। এতে ম্যাচ শেষে ৭৫ রানের জয় পায় শ্রীলঙ্কা।