দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলার প্রায় ৯ বছর পার হতে চলেছে। ওই ভয়াবহ হামলার পর সাংগঠনিকভাবে দাঁড়াতে না পারলেও থেমে নেই জঙ্গিদের অপতৎপরতা। শেষ হয়নি বিচার কার্য। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সারা দেশে ঘাপটি মেরে অস্ত্র ও জাল টাকারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে তারা।
এখনো ধরাছোয়ার বাইরে অন্তত অর্ধশত তালিকাভূক্ত দুর্ধর্ষ জঙ্গি। ৬ মাস আগে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি সালাহ উদ্দিন ওরফে সালেহীন এবং বোমারু মিজানের এখনো হদিস মেলাতে পারেনি পুলিশ গোয়েন্দারা। পুলিশকে হত্যা করে প্রিজন ভ্যান থেকে ওই দু’জনসহ মোট তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো।
২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট একমাত্র মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাড়া দেশের ৬৩ টি জেলায় মোট ৪৩৪ টি স্থানে বোমার বিষ্ফোরন ঘটে। ওইদিনের ঘটনায় দুইজন নিহত এবং অর্ধশত আহত হয়। এরপর শুরু হয় জেএমবির আত্মঘাতি হামলা। বেশ কযেকটি হামলার ঘটনায় নিহত হয় অন্তত ৩০ জন। আহত হয় ৪ শতাধিক। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর ছাড়া সারাদেশে দায়ের করা হয় ১৩৮ টি মামলা। হামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ১৪শ’ জন গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে ৯শ’৮১ জনকে বিভিন্ন মামলায় আসামী করা হয়। রাজধানীর ৩৩ টি স্পটে বোমা হামলার ঘটনায় ২০ টি মামলা দায়ের হয়। এই ২০ টি মামলার মধ্যে ৫ টি মামলার বোমার বাহককে খুঁজে পায়নি পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, মোট একশ ৫৮ টি মামলার মধ্যে একশ’ ৫৪ টি মামলায় ইতিমধ্যেই চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশত মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। যেসব মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে তাতে ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে ফাঁসির দন্ড দেয়া হয়েছে। ফাসি কার্যকর হয়েছে ৬ জনের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে মোট ১১৮ জন। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে ৯৯ জনের। খালাস পেয়েছে ১১৮ জন। জামিন পেয়েছে ৩৫ জন। এখনো পলাতক আছে ৫৭ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আপিল করে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন, হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান ওরফে হায়দার, নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সজিব, নওগাঁর নিয়ামতপুরের আবদুল কাইউম, বগুড়ার শেরপুরের হাফেজ মিনহাজুর ইসলাম ওরফে সোহেল রানা ওরফে সানোয়ার হোসেন, জামালপুরের মো: আক্তারুজ্জামান, খুলনার তরিকুল ইসলাম ওরফে রিংকু, ঝিনাইদহের মনিরুল ইসলাম ওরফে মোকলেছ, নাসরুলাহ ওরফে শান্ত, ঝিনাইদহের রোকনুজ্জামান ওরফে সিবুন, গাইবান্ধার আবু তালেব আনছারী ওরফে বাবুল আনছারী, ঝিনাইদহের মোহন, মামুনুর রশিদ, ঝিনাইদহের মুহিদ আহম্মদ, মোজাম্মেল হক ওরফে মোজাম, তুহিন রেজা, সবুজ আলী, শৈলকুপার ফারুক হুসাইন, গাইবন্ধার মতিন মেহেদী ওরফে মতিনুর ইসলাম, ঝিনাইদহের মহিরুল আল মামুন ওরফে চাদ, ঝিনাইদহের বিলাল হোসেন, সাবউদ্দিন, শৈলকুপার রবজেল হোসেন এবং আজিজুর রহমান।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, জঙ্গিরা আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে তথ্য রয়েছে। সংগঠনের অর্থ যোগান দিতে তারা আন্ডারওয়ার্ল্ডে সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি ও ভাড়া দিচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাল টাকার ব্যবসা করছে। তিনি আরও বলেন, জেএমবি তথা জঙ্গিদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে দেওয়া হলেও তারা থেমে নেই। গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকায় জঙ্গিদের সব ধরনের নাশকতার ছক ভেস্তে যাচ্ছে। নির্মূল না হলেও জঙ্গিবাদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সুযোগ পেলেই জঙ্গিরা তাদের নাশকতার ছক বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। কিন্তু গোয়েন্দাদের নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা সংগঠিত হতে পারছে না।