নারীর সৌন্দর্য চুল। সুন্দর চুল নারীর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এর জন্য প্রয়োজন যত্নের। ঘন, লম্বা চুল যেমন নারীর সৌন্দযকে বাড়িয়ে দেয়। তবে শুধু বড় চুল মানেই সুন্দর, এই ধারনাটাও কিন্তু ভুল। নিয়মিত পরিচর্যা করে ছোট বা মাঝারি চুলকেও নজরকারা করে তোলা সম্ভব।
ধুলোবালি, ঘাম ও মাথার ত্বকের তেলের কারণে চুলে সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধ। এ দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব রাসায়নিক সুগন্ধি চুলের ক্ষতি করে।
চুলের যত্নে আমরা কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করতে পারি। যা নিয়মিত ব্যবহারেও চুলের ক্ষতি হবে না, বরং চুলকে সুন্দর ও সুরভিত করবে।
লেবু
চুলকে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর রাখতে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস। লেবুর রসের প্রাকৃতিক সুবাস আপনার চুলকে সব সময় রাখবে ফ্রেশ ও সুরভিত। প্রতিদিন গোসলের পরে এক মগ পানিতে কিছুটা লেবুর রস চিপে নিন। সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের দুর্গন্ধ, খুশকির সমস্যা ও চুলের রুক্ষতা দূর হবে যাবে।
গোলাপজল
গোলাপজল ব্যবহারেও চুল সুন্দর হয়ে উঠবে। গোসলের পর মগের পানিতে গোলাপজল মিশিয়ে নিন। এরপর সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। তাহলে চুলে বহুক্ষণ থাকবে গোলাপজলের সৌরভ।
বেলিফুলের নির্যাস
চুলকে সুরভিত করতে তাজা বেলিফুল থেকে নির্যাস বের করে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা খাঁটি বেলিফুলের তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
সুরভিত ধোঁয়া
প্রাচীনকালে চুল শুকাতে ব্যবহার করা হতো সুরভিত ধোঁয়া। বিশেষ করে ধূপের ধোঁয়া ব্যবহার করে চুল শুকানোর প্রচলন ছিল অনেক বেশি। এতে চুল সুরভিত থাকতো বেশি সময়।
চা পাতা
নিয়মিত চা পাতার লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেও চুল সুন্দর থাকে। গোসলের পর ঠান্ডা চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন প্রতিদিন। এটা প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করবে এবং চুল হবে উজ্জ্বল।
মেহেদী
প্রাচীনকাল থেকেই চুল রাঙাতে এবং চুলের যত্নে মেহেদীর ব্যবহার হয়ে আসছে। চুলের যত্নে মেহেদীর তুলনা নেই। সেই সঙ্গে চুলকে সুরভিত রাখতেও মেহেদী কার্যকরী। তাই চুলকে প্রাকৃতিকভাবেই সুরভিত রাখতে চাইলে মাঝে মাঝেই মেহেদী ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া চুলের যত্নে আরো কিছু সচেতনতা বাড়াতে হবে। যত্ন নিতে আরো যা করতে পারেন-
তেল
চুলের যত্নে তেলের কোন বিকল্প নেই। ভালো চুল পেতে হলে সপ্তাহে ৪ দিন আপনাকে চুলে তেল দিতে হবে। চেষ্টা করুন রাতে ঘুমানোর আগে তেল দেয়ার। নারিকেল তেলের পাশাপাশি আমন্ড অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, তিল তেল এগুলো মিশিয়ে চুলে দিবেন। ক্যাস্টর অয়েল নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে ১ দিন চুলে অবশ্যই হট অয়েল মাসাজ করবেন।
চুলের যত্নে ‘হেয়ার মাস্ক’
আপনার চুলের পুষ্টির জন্য কিছু ঘরোয়া মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন, যেগুলো খুবই সহজলভ্য এবং নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের সমস্যা দূর হয়।
ডিম চুলের যত্নের একটি অনন্য উপাদান। সপ্তাহে ২ দিন নাহলে অন্ততপক্ষে ১ দিন চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী ডিম ফেটিয়ে চুলে দিয়ে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। তারপর, প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে এক মগ পানিতে ২/৩ চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে চুলে দিয়ে ২ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
যারা চুলের কালার এবং পুষ্টি দুটোই চান, তারা মেহেদি পাতা বাটা এবং ৪ চা চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে চুলে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করবেন না ঐদিন।
মাথায় খুশকি বা ফুসকুড়ি থাকলে নিমপাতা ও মেথি একসাথে বেটে সপ্তাহে ২ দিন লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।
চুল সিল্কি করতে চাইলে ডিম ফেটিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
ডিম এবং মধুর মাস্ক চুলের ভলিউম বাড়াতে সাহায্য করে।
মাথার তালু ঠাণ্ডা রাখার একটি অব্যর্থ উপাদান হলো আলভেরার শাঁস বা জুস। এর সাথে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন।
পেঁয়াজের রস চুল গজাতে সাহায্য করে। ১৫ দিনে ১ বার মাথার তালুতে তুলোয় করে পেঁয়াজের রস লাগাবেন।
যারা কেমিক্যাল-যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে চান না, তারা রিঠা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেটার পানি ছেঁকে শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
তবে শুধু চুলের উপরীভাগের পরিচর্যাই নয় ,ভালো চুল পেতে হলে খাওয়া দাওয়াতেও নিয়ম মেনে চলতে হবে।
প্রোটিন যেমন মাছ, ডিম এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার চুলের জন্য ভালো। শাক সবজি এবং ফল ও খেতে হবে প্রচুর। পেটের সমস্যা থেকে অনেক সময় চুল পড়ে, তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া চুল ছেড়ে না রাখাই ভালো। এতে চুলকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানো যায়। গোসলের পর চুল শুকিয়ে ভালোভাবে বেণি বা খোপা করে রাখুন। বাইরে বের হলে স্কার্ফ ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন অতিরিক্ত তাপ বা ঠাণ্ডা দুটোই কিন্তু চুলের পক্ষে ক্ষতিকর।
রোদে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন এবং এয়ার কন্ডিশন রুমে অনেকক্ষণ থাকা থেকে বিরত থাকুন।