বর্তমানে দেশে সুশাসনের বড়ই অভাবঃ গুড গভর্ন্যান্স ফোরামের সেমিনারে বিশিষ্টজনদের অভিমত
”দেশে মুখে মুখে সুশাসনের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই ঃ ড. মিজানুর রহমান শেলী”
সুশাসন ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, দেশে বর্তমানে সুশাসনের বড়ই অভাব রয়েছে। নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ কোনোটিই গণতন্ত্রের সঠিক পদ্ধতিতে চলছে না। সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। গতকাল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে গুড গভর্ন্যান্স ফোরাম এ সেমিনারের আয়োজন করে। মূল প্রবন্ধে সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ বলেন, দেশে স্বাধীনতার পর কখনো গণতন্ত্রের চলার পথ মসৃণ ছিল না। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল গণতন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত। তিনি আরো বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অধিক কার্যকর হলেও জনমতকে উপেক্ষা করে নেহায়েত সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তা বাতিল করা হয়েছে। আইনের শাসনের জন্য সংসদ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন একটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন সে সরকারের ভূমিকা জনগণের কাছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক বিবেচিত হয় না। এ ছাড়া তিনি প্রবন্ধে বিচার বিভাগ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ, পুলিশের ভূমিকা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, পেশাজীবীদের দলবাজিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, দেশে মুখে মুখে সুশাসনের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই। এ জন্য আমাদের পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, দুদক, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, সুশাসন একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কিন্তু ’৭২ সাল থেকে দেশে কোনো সরকারই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেয়নি। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ, আইনের শাসন, জবাবদিহিতাসহ পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরেন। পিয়াস করিম বলেন, রাজনীতিকেরা সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, কিন্তু প্রকৃত উদ্যোগ নেন না। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত উদ্যোগটাই সবচেয়ে জরুরি। তিনি আরো বলেন, শুধু রাজনীতিকদের হাতে রাজনীতি ছেড়ে দিলে হবে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। একদিনে সবকিছু পরিবর্তন করা যাবে না ঠিকই কিন্তু সবার একটু উদ্যোগে এক সময় অনেক পরিবর্তন ঘটবে। গুড গভর্ন্যান্স ফোরামের আহ্বায়ক বিচারপতি সিকদার মকবুল হকের সভাপতিত্বে ও এ কে এম শরিফুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, সাবেক এমপি হুমায়ূন কবির হিরু, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার, ড. মোমেনা খাতুন, ড. রেজাউল করিম চৌধুরী, মাহবুবুল আলম কমল, মাহবুব নেওয়াজ চৌধুরী, মোহাম্মদ সারফুদ্দিন, নাজমা আক্তার প্রমুখ।