বর্তমান সরকার ২০১৯ সালের আগেই নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে বলে উল্লেখ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সাথে সংলাপের মাধ্যমে সরকার ২০১৯ সালের আগেই নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।”
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ডিআরইউতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্যা রিপোর্টাস-এ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
‘আগামী ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়’ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “জনগণ ও বিএনপির আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৯ সালের আগেই নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি।”
‘জামায়াত থাকলে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়’-আওয়ামী লীগ নেতাদের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “এটা তাদের কথা এবং এর মধ্য দিয়ে আসলে তাদের দুর্বলতাই প্রকাশ পাচ্ছে। তারা আসলে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। জামায়াত বিএনপিতে থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগ এর আগে বিএনপির সাথে সংলাপ করেছে। তাই এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।”
‘সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করা হবে’- মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০ দলীয় জোটের সমাবেশে মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকারের সকল কর্মকাণ্ড জনবিরোধী, জনগণের পক্ষে নয়। তারা জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তাই জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে আঙ্গুল বাঁকা করতেই হবে।”
জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ গত সাধারণ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন।
বিএনপির দাবি করছে- সেই বৈঠকে আওয়ামী লীগ বলেছিল, এটা সংবিধার রক্ষায় নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের পর আবারও নির্বাচন দেয়া হবে।
বিএনপির এই দাবির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভিন্নমত পোষণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন অস্বীকার করতেই পারে। কারণ এই সকল আলোচনায় কোনো প্রমাণ থাকে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটাই সত্য যে তারা আরো একটি নির্বাচনের কথা বলেছিল।”
বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হবে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভায় সরকারকে সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। সরকার সেটা কর্ণপাত করছে না। আর সংলাপের আহ্বান কোনো আনুষ্ঠানিক ও অনুষ্ঠানিকতায় বিষয় নয়।”
ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন দেয়া হবে বলে রমজান মাসে বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি, এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “গাড়ি চালাতে হলে প্রথমে ফাস্ট গিয়ার, পরে সেকেন্ড গিয়ার ও থার্ড গিয়ার দিতে হয়। একইভাবে আন্দোলনেরও এগুলো থাকে। তবে সময় আসলে আমরা আন্দোলনের টপ গিয়ারে যাবো।”
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল করা হবে কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপির ক্ষমতায় আসলে এই নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। একই সাথে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে দিতেও বিএনপি কাজ করবে।”
সহিংস আন্দোলন ছাড়া কি দাবি আদায় সম্ভব- এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “সহিংস আন্দোলন বিএনপি করে না। বিএনপির ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন করেছে সেই আন্দোলনে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। আর তার দোষ বিএনপিকে দিয়েছে। তবে সহিংস আন্দোলন ছাড়াও দাবি আদায় সম্ভব।”
আওয়ামী লীগসহ বিএনপির অনেক নেতারাই বলছেন, ৫ জানুয়ারির আন্দোলন ঠেকাতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে- এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিএনপির আন্দোলন সফল হয়েছে। কারণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দেশের ৪২টি দলের মধ্যে ৩০টি দল সেই নির্বাচন বর্জন করেছে। দেশের ৯০ শতাংশ জনগণও সেই নির্বাচন বর্জন করেছে। তাই আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।