প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে হচ্ছে এ নতুন ফ্রন্ট। এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে। জোট গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা গতকাল দুপুরে মতিঝিলের একটি কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। নতুন ফ্রন্টে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার জন্য দেশের অন্য গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই ফ্রন্টের নেতারা। পাশাপাশি বিকল্প শক্তি সমাবেশের প্রাথমিক খসড়া কর্মসূচি তৈরি করার জন্য ৫ সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সাব-কমিটি বিভিন্ন শ্রেণী পেশাসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে নেতাদের মধ্যে। নেতৃবৃন্দ দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ধারায় দেশ পরিচালনার লক্ষ্যে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার জন্য একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, রাজনৈতিক নেতা সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ। সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠকের বিষয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে সমাবেশ করবো। এতে অংশগ্রহণের জন্য সৎ, নিষ্ঠাবান দেশপ্রমিক নাগরিকদের আহবান জানাচ্ছি। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। এর ফলে রাজনীতি আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দখলে থাকবে না। বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
এর আগে গত ২৯শে আগস্ট গণফোরামের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ‘গণতন্ত্র ও দেশ বাঁচাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে’ ১১ দফা প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন। এর মধ্যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংলাপের মাধ্যমে ঐক্য না হলে গণভোটের আয়োজন, অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও স্বাধীন-শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত এবং সংবিধান সংশোধন করে তা যুগোপযোগী করার দাবি ছিল। নয়া এ রাজনৈতিক ফ্রন্টের উদ্যোক্তা সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন থেকে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের যে প্রক্রিয়া চলে আসছিল তা নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। কয়েকটি দলের কারণে এ প্রক্রিয়া বারবার থমকে যায়। এবার এসব দলের নেতাদের এড়িয়ে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সূত্র জানায়, দুই জোটের অংশীদার কোন শরিকও যদি নতুন জোটে আসতে চায় তাহলে স্বাগত জানানো হবে। এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও সম্পৃক্ত হতে পারবেন এই রাজনৈতিক ফ্রন্টে। এর আগে বিকল্পধারা বাংলাদেশ, গণফোরাম ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সমন্বয়ে এনডিএফ নামে নতুন একটি জাতীয় ফ্রন্টের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। পরে এ জোটের কার্যক্রম আর এগোয়নি। এ জোটের অন্যতম শরিক গণফোরাম নয়া জোটে থাকলেও বাকি দু’টি দল নতুন জোটে অংশ নিচ্ছে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।