কারাগারে আটক আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তরে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান। গতকাল ঢাকা-দিল্লি ১৫তম স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ তথ্য জানান। সচিব বলেন, অনুপ চেটিয়া ইতোপূর্বে বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন, কিন্তু এখন তিনি ভারতে ফিরতে চান। আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে হস্তান্তরে বাংলাদেশের সদিচ্ছার কথা গতকালের বৈঠকে জানানো হয়েছে। সচিব বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনসহ যে সব খুনি ভারতে পালিয়ে রয়েছে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে। নূর হোসেনকে কত দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে। নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভারত তাকে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে কেউ যদি ভারতে থেকে থাকে তাদেরকে ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র সচিব। তবে ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ ও রিসালদার মুসলেউদ্দিনকে ফেরতের বিষয়ে ভারতের তরফে সুনির্দিষ্টভাবে কি জবাব বা আশ্বাস মিলেছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, খুনিরা কোথায় আছে- সে বিষয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। তারা তাদের অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে। এটি সরবরাহ করা গেলে তাদের আটক করে ফেরত পাঠানোর সচ্ছিদা ব্যক্ত করা হয়েছে। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ওই বৈঠকে অমীমাংসিত স্থল সীমান্ত, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা, দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি, বাংলাদেশের পুলিশ ও বিজিবিকে ভারতের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো আলোচনায় স্থান পায়। বৈঠকে বাংলাদেশের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান। ভারতের পক্ষে দেশটির ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব অনিল গোস্বামী। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সামনে দুই নেতা ফটোসেশনে অংশ নিলেও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব একই ব্রিফ করেন। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, অতীতের যে কোন বৈঠকের চেয়ে গতকালের বৈঠকে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা হয়েছে। এটি কমেছে তবে হত্যাকাণ্ড একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সীমান্ত এখন যে সব হত্যাকাণ্ড ঘটছে তাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশের ওই কর্মকর্তা বলেন, স্পর্শকাতর এ বিষয়টি গতকালে বৈঠকেও তোলা হয়েছিল। যে কোনভাবে এটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার অনুরোধ করা হয়েছে। জবাবে ভারতের কর্মকর্তারা ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি ছোড়ার বিষয়টি জানালেও তা বন্ধে তাদের সদিচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। স্বরাষ্ট্র সচিব দাবি করেন, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট যে সব বিষয় আলোচনায় উঠেছে সেখানে কোন কিছুই দ্বিমত হয়নি। তবে দু’-একটি বিষয়ে ‘তথ্যগত বিভ্রান্তি’ থাকতে পারে মনে করে তা যাচাই-বাছাই করার বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়েছে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সাবলীল ও সুন্দর এবং উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষায় অরক্ষিত সীমানায় বেড়া নির্মাণের বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক আইন এবং বিধি মেনে ১৫০ গজের মধ্যে ওই বেড়া নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীমান্তে মাদক, অস্ত্র, নারী ও শিশু পাচার রোধে কঠোর হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দুই দেশ। একই সঙ্গে জাল মুদ্রার ব্যবহার ঠেকানোর বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উভয় দেশের কর্মকর্তারা মনে করেন ভারত থেকে আসা বা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের গন্তব্য তৃতীয় কোন রাষ্ট্র। পাচারের শিকার (ভিকটিম) নারী ও শিশুদের মানসিক এবং শাররিক স্বস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং তাদের পুর্নবাসনের বিষয়টি মানবিক থেকে বিবেচনার জন্য পুলিশ ও সীমান্ত বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়ার বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছেছেন নীতিনির্ধারণী ওই কর্মকর্তারা। আন্তঃসীমান্ত অপরাধ ঠেকানোর বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব। বৈঠক শেষে ভারতের প্রতিনিধি দলের প্রধান পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন। আজ ভারতীয় প্রতিনিধি দল রাজশাহীস্থ পুলিশ একাডেমী পরিদর্শনে যাবে। বিকালে তাদের দিল্লির পথে রওনা হওয়ার কথা।