জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতি পাওয়া বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, গত নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে তার কাছে অনেক তথ্য আছে। যদি আরও বাড়াবাড়ি হয় প্রয়োজনে তিনি সব গোমর ফাঁস করে দেবেন। তিনি বলেন, কেন নির্বাচনে যাওয়া হলো না- কার ইঙ্গিতে তা হলো সব প্রকাশ করবো। পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এখন বলছেন- ফেব্রুয়ারি-মার্চে নির্বাচন। তোমরা প্রস্তুতি নাও। গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমার সদস্য পদ এরশাদ সাহেব খেতে পারবেন না। তার সেই সুযোগও নেই। তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত এমপি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর জিয়াউদ্দিন বাবলু বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদকে সমর্থন দেন। আর আমাকে বিরোধীদলীয় হুইপ হিসেবে সমর্থন দেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বাবলু উপনেতা হতে চেয়েছেন। হতে পারেননি বলে দলের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন। চেয়ারম্যান স্যারকে উল্টাপাল্টা বোঝাচ্ছেন। স্যার ওই বলয় থেকে বের হতে পারছেন না। এর ফলে দল ছোট হতে হতে এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে আগামীতে নির্বাচন করার জন্য ৩০ জন প্রার্থীও নেই। এরশাদকে প্রশ্ন রেখে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আপনি ক্ষমতায় যেতে চান! অথচ আপনার তো প্রার্থী নেই। এসব কথা বলি বলে আমাকে যুদ্ধাপরাধী বানানো হয়। বলা হয়, জামায়াত-বিএনপির দোসর। অথচ গত নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ থেকে নির্বাচন করায় জামায়াত-বিএনপি আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমি যে মোটরসাইকেলে ছিলাম তা ভেঙে দিয়েছে। তাহলে আমি কি করে জামায়াতের পক্ষের হতে পারি? তাজুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, যুদ্ধাপরাধী হলে ২০০১ সালের মহান স্বাধীনতার ৩০ বছর পূর্তিতে সংবাদপত্র পরিষদ কুড়িগ্রামের বিশেষ প্রকাশনায় আমার বাণী নেয়া হতো না। জামায়াত-বিএনপির পক্ষে কে বা কারা কাজ করছে আমরাও তা জানি। আমরা জানি কারা তাদের মিশন সফল করতে চায়। এরশাদের খালাতো ভাই তাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, কুড়িগ্রাম থেকে ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমি সাতবার এমপি হয়েছি। আমি যদি যুদ্ধাপরাধী হতাম তাহলে আমাকে স্থানীয় জনগণ বারবার তাদের জণপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতেন না। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য দলের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার একটি গ্রুপ যারা আমার প্রতিপক্ষ আমাকে যুদ্ধাপরাধী বানাচ্ছে। আমি জাপার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। ওই সময়ে ৯ জন মহাসচিবকে অব্যাহতি দিয়েছেন এরশাদ। রওশন এরশাদকে ৪ বার বহিষ্কার করেছেন। সুন্দরভাবে কারও বিদায় হয়নি। পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারায় এটা তিনি করতে পারেন। তবে গঠনতন্ত্রে আছে-ওই ক্ষমতা প্রয়োগের সময় প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমাকে যখন বের করে দেয়া হয় আমি তখনও প্রেসিডিয়াম সদস্য। আমি কি অন্যায় করেছি? আমার বক্তব্য শোনার সুযোগ দেয়া হয়নি। এটা দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি রাজনীতি করতে আসি অপমানিত হওয়ার জন্য! আর তার ভাই জি এম কাদের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে বলেছেন সংসদীয় দল চেয়ারম্যান এরশাদের সিদ্ধান্ত ছাড়া কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করতে পারেন না। বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধী দলীয় উপনেতা সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করা হচ্ছে। এটা এরশাদ বা রওশন এরশাদ করেননি। যারা এসব বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র না পড়েই বলেন। সদ্য অব্যাহতি পাওয়া তাজুল বলেন, নির্বাচনের পর বিরোধীদলীয় নেতা হতে চেয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু সংসদীয় দল রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনীত করেছেন। এছাড়া পার্টি চেয়ারম্যান আমাকেও বলেছেন রওশনের পরের আসনে তার বসতে ভাল লাগে না। বেমানান দেখায়। তোমরা আমার জন্য একটা কিছু করো। দলের এ অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এরশাদ কানকথা শোনেন। নিজের বুদ্ধিতে চলেন না। আমি বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের হুইপ। তার কথা শুনতে বাধ্য। এ অবস্থায় বিষয়টি সুরাহার জন্য পৃথক পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শরণাপন্ন হন এরশাদ ও রওশন। বুধবার অব্যাহতি পাওয়ার পর সংসদ লবিতেই সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন রাঙ্গা-তাজুলসহ অন্যরাও। এর আগে ৩১শে আগস্ট দলের সংসদীয় দলের বৈঠকে মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসতে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন এরশাদ। ওই সময় তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন রওশন। সামনে এরশাদ আরও কয়েকজন নেতার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়েও নিজের অনুগত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করেছেন। এদিকে সংসদ ভবনের লবিতে দলীয় এমপিদের হাতাহতির ঘটনায়ও ক্ষুব্ধ এরশাদ। এ ঘটনার পর ওই রাতেই সংসদ ভবনে সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চিফ হুইপের পদ থেকে তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া ও মশিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এ বৈঠকে।
এদিকে দলে চলমান টানাপড়েন সামনে নিয়ে আজ বৈঠকে বসছে পার্টির সংসদীয় দল। এ বৈঠকে বিরোধী দলের উপনেতা নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হবে। আগের বৈঠকে পার্টি চেয়ারম্যান উপস্থিত না থাকলে আজকের বৈঠকে এরশাদ ও রওশন এরশাদ মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে।