জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দুই মার্কিন সাংবাদিকের পর এবার গলা কেটে হত্যা করল এক ব্রিটিশ ত্রাণকর্মীকে। ডেভিড হেইন্স নামের ওই ব্রিটিশ নাগরিক একটি মানবিক সহায়তা সংস্থায় কাজ করতেন। হেইন্সকে হত্যার ঘটনায় কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
গতকাল রোববার জরুরি বৈঠকের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, যত সময়ই লাগুক, বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। তবে চাপ থাকলেও এখনই বিমান হামলায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেননি তিনি। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির।
ডেভিড হেইন্সের শিরশ্ছেদের ভিডিওচিত্র গত শনিবার রাতে প্রকাশ করে আইএস। শুরুতে দেখানো হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের ছবি। এরপর দেখানো হয় হাঁটু গেড়ে আধবসা অবস্থায় থাকা এক ব্যক্তিকে। চেহারা অনুযায়ী কমলা রঙের পোশাক পরা ওই ব্যক্তিই হেইন্স। তাঁর পাশে দাঁড়ানো সারা শরীর ও মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা এক ব্যক্তি, হাতে বড় ছোরা।
ভিডিওতে হেইন্স বলেন, ‘আমার নাম ডেভিড কথর্ন হেইন্স। মি. ক্যামেরন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমার এ পরিণামের জন্য আপনিই পুরোপুরি দায়ী।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন জোটে যোগ দিয়েছেন ক্যামেরন। …পার্লামেন্টের এই স্বার্থপর সিদ্ধান্তের বলি হতে হবে ব্রিটিশ জনগণকেই।’
হেইন্সের কথার পর বলতে শুরু করেন ছোরা হাতে দাঁড়ানো সেই ব্যক্তি। তাঁর উচ্চারণ শুনে মনে হয় তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি বলেন, ‘কুর্দি পেশমারগা যোদ্ধাদের অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ক্যামেরন। এই ব্রিটিশ নাগরিককেই দিতে হচ্ছে তার মূল্য।’ এর আগে দুই শিরশ্ছেদের ঘটনায়ও ঘাতকের ইংরেজি উচ্চারণ ছিল দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বাসিন্দাদের মতো।
অ্যালান হেনিং নামে আরেক ব্রিটিশ জিম্মিকেও হত্যার হুমকি দেন ওই মুখোশধারী। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভিডিওচিত্রটি দেখে মনে হয়েছে তা সঠিক।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, আইএসকে ধ্বংস করতে যা যা করা প্রয়োজন, যুক্তরাজ্য তা করবে। সংগঠনটিকে তিনি অশুভ শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
হেইন্সের শিরশ্ছেদের ভিডিওচিত্রটি প্রকাশের পরপরই গতকাল সকালে সরকারের জরুরি কোবরা কমিটির বৈঠকে বসেন ক্যামেরন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার নানা দিকে আইএসকে মোকাবিলা করছে। তবে এই মুহূর্তে বিমান হামলা শুরু করা হবে না। ধাপে ধাপে ধীরেসুস্থে তবে পরিকল্পিতভাবে ও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে আইএসকে তাড়া করে শেষ পর্যন্ত নির্মূল করা হবে।
যুক্তরাজ্য এর আগে অনেক সময় বিদেশে মার্কিন সামরিক অভিযানে সবার আগে যোগ দিত। তবে এবার যুদ্ধের প্রতি জনগণের অনীহা, গত বছর সিরিয়ায় হামলা অনুমোদনে পার্লামেন্টের অস্বীকৃতি ও স্কটল্যান্ডের গণভোটের প্রাক্কালে বিদ্যমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে ক্যামেরন সংযম দেখাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘ডেভিড হেইন্সের এ রকম বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।’
ক্রোয়েশিয়ায় বাস করা ৪৪ বছর বয়সী হেইন্স কাজ করতেন প্যারিসভিত্তিক একটি মানবিক সহায়তা সংস্থায়। ২০১৩ সালের মার্চে তাঁকে সিরিয়ায় ত্রাণ কর্মকাণ্ডের সময় জিম্মি করে আইএস।
ইরাকে আট সুন্নিকে হত্যা: উত্তর ইরাকের ছোট একটি গ্রামে শুক্র ও শনিবার দুই দফায় হামলা চালিয়ে আট সুন্নিকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে আইএস জঙ্গিরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ কথা জানিয়েছে। ইরাকের সেনাবাহিনীর পক্ষে গোয়েন্দাগিরির দায়ে অভিযুক্ত করে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যসহ আটজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রসঙ্গত, আইএস সদস্যরা নিজেরাও কট্টরপন্থী সুন্নি।