রাষ্ট্র খাতের একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিতে নতুন করে সরকারকে প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা জোগান দিতে হবে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি অধিকারমূলক বা রাইট শেয়ার ছেড়ে মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারকে তার নির্ধারিত শেয়ারের বিপরীতে নতুন এই বিনিয়োগে যেতে হবে।
ইতিমধ্যে এই অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আইসিবি। গত বৃহস্পতিবার এই চিঠি পাঠানো হয়। জানা গেছে, আইসিবির প্রায় চার কোটি ২২ লাখ শেয়ারের মধ্যে ২৭ শতাংশ বা এক কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার শেয়ার রয়েছে সরকারের হাতে। বাকি শেয়ার রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির হাতে।
আইসিবি অধ্যাদেশ বা আইন, ২০১৪ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ২৭ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে থাকতে হবে। এখন সরকার যদি অধিকারমূলক শেয়ারের টাকা না দেয়, তাহলে বাকি ৭৩ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে অধিকারমূলক শেয়ার ছাড়তে পারবে না আইসিবি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ১২ আগস্ট আইসিবির অধিকারমূলক শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে। এতে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ৪০০ টাকা অধিমূল্য বা প্রিমিয়াম যোগ করে প্রতিটি শেয়ারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। বিদ্যমান দুটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে একটি অধিকারমূলক শেয়ার ছেড়ে প্রায় এক হাজার ৫৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এ জন্য নির্ধারিত রেকর্ড তারিখও অতিক্রম হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর।
নিয়ম অনুযায়ী, রেকর্ড তারিখে যাদের হাতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার থাকবে, তারাই অধিকারমূলক শেয়ারের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। পরবর্তীকালে ঘোষিত তারিখে ওই শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে শেয়ারধারীকে। আইসিবি অধিকারমূলক শেয়ারের অর্থ সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করেছে চলতি বছরের ৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর।
আইসিবি বলছে, মূলধনকাঠামো শক্তিশালী ও নিজস্ব স্থায়ী তহবিল গঠনের জন্যই অধিকারমূলক শেয়ার ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ অর্থ যথাসময়ে সংগ্রহ করা গেলে তা দিয়ে নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় আরও বেশি সক্রিয় হতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোক্তা শেয়ারধারী হিসেবে আইসিবির কাছ থেকে দুই বছরের ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ বাবদ প্রায় ৬৮ কোটি টাকা পাবে সরকার। ওই পাওনা বাদ দিয়ে অধিকারমূলক শেয়ারের জন্য সরকারকে ২১৬ কোটি টাকা জোগান দিতে হবে। বাজেট কাঠামোর আওতায় এই অর্থ জোগান দেওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে এই অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি।
আইসিবির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৪২২ কোটি টাকা, যা ১০০ টাকার প্রায় চার কোটি ২২ লাখ শেয়ারে বিভাজিত। এর বাইরে নতুন করে প্রায় দুই কোটি ১১ লাখ অধিকারমূলক শেয়ার ছাড়া হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ছয় কোটি ৩৩ লাখে।
আইসিবি অধ্যাদেশ বা আইন, ২০১৪ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ২৭ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে থাকতে হবে। এই পরিমাণ শেয়ার না থাকলে বাকি ৭৩ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে অধিকারমূলক শেয়ার ছাড়তে পারবে না আইসিবি।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব নাসির উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানান, চিঠিটি গতকাল পর্যন্ত তাঁর হাতে পৌঁছায়নি। চিঠি পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও আইসিবি সূত্র বলছে, ১৮ সেপ্টেম্বর তারা চিঠি পাঠিয়েছে।