আগ্রাসন চালানোর পথ সুগম করতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামের জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে ওঠা-সংক্রান্ত সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আইএস গড়ে ওঠার পেছনে সিআইএর সহযোগিতার আভাস মেলে।
আইএস দমনে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইরাকে বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও বাগদাদের অলিগলি থেকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এই সন্দেহ রয়েছে যে, জঙ্গিগোষ্ঠীটির পেছনে রয়েছে সিআইএ।
ইরাকের উপপ্রধানমন্ত্রী বাহা আল আরাজি বলেন, ‘আমরা জানি, এটি কে তৈরি করেছে।’
আইএস দমনের অজুহাতে ইরাকে সম্ভাব্য মার্কিন সেনা মোতায়েনের যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক সমাবেশে হুঁশিয়ার করেছেন দেশটির প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আল সদর। তিনিও প্রকাশ্যে আইএস সৃষ্টির জন্য সিআইএকে দায়ী করেছেন।
সদরের সমাবেশে আসা হাজারো মানুষের মধ্যে অধিকাংশই একই তত্ত্বে বিশ্বাসী। এই দলে দেশটির পার্লামেন্টর সদস্যরাও রয়েছেন। ইরানেও এই সন্দেহ বেশ জোরালো।
আইএসের নাম করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আবার ইরাকে ফিরে আসছেন বলে দেশটির মানুষের মনে ধারণা জন্মেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবশ্য বলেছেন, আইএস দমনে ইরাক বা সিরিয়ার ভূমিতে সেনা পাঠাবেন না তিনি।
কিন্তু ওবামার এই কথায় খুব কমসংখ্যক ইরাকির আস্থা আছে। রাদ হাতেম নামের এক ইরাকি বলেন, ‘আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি না।’
হায়দার আল আসাদি নামের আরেকজন ইরাকি বলেন, ‘আইএস সুস্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি। আইএসকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আবারও আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে এই সন্দেহ আছে। কোনো কোনো পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরাকের পর এবার সিরিয়ায় আগ্রাসন চালাতে আইএসকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটনভিত্তিক খ্যাতিমান ফ্রিল্যান্স লেখক মাইক হুইটনির মতে, জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো মার্কিনিদের বিভ্রান্ত করতে যাচ্ছেন ওবামা। তিনি আইএস জঙ্গিদের দমনের কথা বলছেন। কিন্তু তাঁর মূল উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়। অঞ্চলটিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি, বিদ্যমান সীমান্ত নিশ্চিহ্ন করা ও ক্রীড়নক সরকার বসাতে ওবামা প্রশাসন তৎপর।
হুইটনির দাবি, আরেকটি রক্তক্ষয়ী আগ্রাসনের পথ সুগম করতেই মূলত পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের সহযোগীরা আইএসকে সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষক প্যাট্রিক মার্টিনের ভাষ্য, আইএস হলো মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের অজুহাত।