ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভুলেই রিয়ালের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েছিল এলচে। কিন্তু সেই ভুল যে তাঁকে এমনভাবে তাতিয়ে দেবে, সেটা বোধ হয় ভাবতে পারেননি এলচের খেলোয়াড়েরা। একে একে ৪ গোল করে একাই এলচেকে করলেন বিধ্বস্ত। হঠাৎ ভুলের দায়টাও খুব ভালোভাবেই মিটিয়ে নিলেন টানা দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকে।
রোনালদোর ৪ গোলের সঙ্গে গ্যারেথ বেলের আরও একটি গোলে কাল এলচের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছে ৫-১ গোলে।
কিছু দিন আগেই ডেপোর্টিভো লা করুনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন রোনালদো। সেই ম্যাচে রিয়াল জিতেছিল ৮-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে। মোট ৯ গোল এই মুহূর্তে স্প্যানিশ লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে আসীন তিনিই।
খেলার ১৫ মিনিটে গোটা বার্নাব্যুকে স্তব্ধই করে দিয়েছিলেন রোনালদো। এক অমার্জনীয় ভুলে এলচেকে তিনি উপহার দেন পেনাল্টি। সেই পেনাল্টি থেকে প্রতিপক্ষ যখন এগিয়ে গেল, তখনই ভেতরে ভেতরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ভেতরের সেই উত্তাপ পরে ছড়িয়ে দিলেন গোটা দলের মধ্যেই। ভুলে দেওয়া এক পেনাল্টির প্রতিশোধটা তুলতে প্রতিপক্ষকে নিয়ে রীতিমতো খেলা করলেন ব্লাঙ্কোস-তারকারা। এলচের এগিয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিট বাদেই দারুণ এক হেডে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। হামেস রদ্রিগেজ ছিলেন বেলের এই গোলের উৎসমূল। এর পরের সময় পুরোটাই ছিল ওই সিআর-সেভেনের।
২৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকেই দলকে ২-১ গোলে এগিয়ে নেন রোনালদো। এর ঠিক চার মিনিট বাদেই তাঁর মাথা থেকে আসে আরও একটি গোল। মার্সেলোর ক্রস থেকে তাঁর হেড কোনো সুযোগই দেয়নি এলচে গোলরক্ষককে।
৮০ মিনিটে এলচের ডি-বক্সে ফাউলের স্বীকার হন রোনালদো নিজেই। এই ফাউলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি না বাজিয়ে পারেননি। ম্যাচে পাওয়া দ্বিতীয় পেনাল্টি থেকে নিজের আরও একটি হ্যাটট্রিক পূরণ করতে রোনালদোর একেবারেই বেগ পেতে হয়নি। খেলার একেবারে অন্তিম মুহূর্তে করা রোনালদোর চতুর্থ গোলটি ছিল দারুণ দৃষ্টি নন্দন। বেলের পাস বাঁ পায়ে নিয়ন্ত্রণে ডান পায়ের প্লেসিং শটে রোনালদো রিয়ালকে এনে দেন চমৎকার এক জয়।
৪ গোলের সব কৃতিত্বই ম্যাচ শেষে দলের বাকি খেলোয়াড়দের হাতে তুলে দিয়েছেন রোনালদো, ‘আমি জানি গোল করা অনেক কঠিন এক কাজ। আমার দলের অন্য সতীর্থরা যদি ঠিকমতো পাসগুলো না বাড়াত, তাহলে আমি হয়তো এই কৃতিত্বের ভাগীদার হতে পারতাম না। ৪ গোলের পুরো কৃতিত্বই তাদের।’ খেলার শুরুতেই নিজের ভুলটির আক্ষেপ তাঁর ম্যাচ শেষেও যায়নি, ‘ভুলটা ছিল অমার্জনীয়, ওটা কেন করলাম বুঝতে পারছি না।
প্রতিপক্ষকে পেনাল্টিটা এক অর্থে উপহারই দিয়েছি আমি।’ তবে রোনালদো স্বস্তি খুঁজছেন তাঁর সেই ভুল দিন শেষে গুরুতর কিছু না হওয়ায়, ‘আমরা পুরো ম্যাচে ভালো করেছি। আমার অমার্জনীয় ভুলটি শেষ অবধি বড় কোনো বিপদের কারণ হয়নি। আমরা দ্রুত দুটি গোল করে খুব ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরেছি।’
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি স্বাভাবিকভাবেই দারুণ খুশি রোনালদোর খেলায়। তিনি বলেছেন, ‘মৌসুমের শুরুতে পাওয়া তিন সপ্তাহের বিশ্রামটা যে ওর দারুণ কাজে এসেছে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। ওই বিশ্রামেই নিজের সমস্যা, চোট সবকিছুকেই বিদায় করেছে রোনালদো।’
আনচেলত্তির ভাষায়, ‘বিশ্রামটা ওর প্রাপ্য ছিল। তবে ভালো লাগছে যে বিশ্রামটা সে কাজে লাগিয়েছে দারুণ পেশাদারির সঙ্গে। সে চোট থেকে মুক্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে রোনালদো অনেক বেশি শক্তিশালী। সে দারুণ খেলছে, গোলও পাচ্ছে অহরহই।