ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসে এক সাংবাদিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মনিরুজ্জামান মনির (৪৫)। তিনি দৈনিক ভোরের কাগজ ও দেশটিভির ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশের ধারণা, হৃদরোগ অথবা ব্রেইন স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হতে পারে। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল দুপুরে সোয়া ১টায় বংশাল থানাধীন নবাবপুরের ১৬৫ নম্বর সাদনান ইন্টারন্যাশনাল নামে নবম তলার একটি আবাসিক হোটেলের ৬০৩ নম্বর কক্ষে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মনির। পরে ওই হোটেলের কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। সাদনান ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলের রিসিপশন কর্মকর্তা মহসিনুর রহমান জানান, গত রোববার রাতে সাংবাদিক মনির হোটেলের ৬০৩ নম্বরের এক বেডের কক্ষটি ভাড়া নেন। গত রাতে নিহতের এক বন্ধু ওই কক্ষে গিয়ে আড্ডা দেন। হোটেল বয় আনিস জানান, সকাল বেলা তিনি নাশতা করার পর কয়েকবার বমিও করেছেন। বমির পর একবার স্যালাইন খেয়েছেন। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেও তিনি রাজি হননি। দুপুরে তার রুমের দরজা খোলা ছিল। তার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য তার কক্ষে গেলে বেডের ওপর তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন তার মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছিল। পরে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে ইসিজি করানো হয়। পরে তাকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ভগ্নিপতি ও সাবেক জেলা জজ ইদ্রিস আলম জানান, ১৯৯০ সাল থেকে মনির ঝালকাঠি জেলায় সাংবাদিকতা করে আসছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ব্যবসাও করতেন। গত দু’দিন আগে তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ মোবাইল ফোনে কথা হয়। তার বড় কোন রোগ ছিল না। তবে পেটে প্রচণ্ড এসিড সমস্যায় ভুগছিল। হৃদরোগ অথবা ব্রেইন স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মনিরের পিতার নাম আবদুল মজিদ। গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার বাহের রোড এলাকায়। তিনি দুই মেয়ে এক ছেলের পিতা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। নিহতের ফুফাতো ভাই মুহিদ খন্দকার জানান, তার ভাই ঝালকাঠি জেলার জনপ্রিয় সাংবাদিক ছিলেন। গত বছর তিনি হজ করেছেন। অনেক দিন ধরে সাংবাদিকতা করায় এলাকাবাসীর সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। নিহতের বন্ধু পটুয়াখালী জেলার বাউফল এলাকার বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি হারুনুর রশীদ জানান, আমরা এক হোটেলের বোর্ডার ছিলাম। তবে আমার কক্ষ নম্বর ছিল ৭০১। রাতে আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। তবে রাতে তার কোন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। বংশাল থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ হোটেলের কক্ষ থেকে নিহতের জিনিসপত্র জব্দ করেছে। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। অসুস্থ অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। তার মৃত্যুর বিষয়ে তবুও যেন সন্দেহ না থাকে এ জন্য নিহতের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।