বাংলাদেশের হিজড়া সমপ্রদায়ের কথা এখন বিশ্ব মিডিয়ায়। গতকাল তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল-এ। এতে বলা হয়েছে, হিজড়াদের করুণ কিন্তু মূর্ত কিছু ছবি ধারণ করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ফটোগ্রাফার শাহরিয়া শারমিন। সেই সব ছবি নিয়ে তিনি করছেন চিত্র প্রদর্শনী। তাতে ফুটে উঠেছে এ দেশের হিজড়াদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এ জনগোষ্ঠী সমাজের মূল অংশ থেকে বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন। হিজড়াদের নিয়ে সমাজের অন্যান্য মানুষের মতো শারমিনেরও একটি নেতিবাচক ধারণা ছিল। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই জনগোষ্ঠী সমপর্কে জানার। খুব অল্প সময়েই তার ভুল ভাঙে। সেখান থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই হিজড়াদের জীবনধারা নিয়ে ফটোশ্যুট করার। অবশেষে করেছেনও। এর নাম দিয়েছেন ‘কল মি হেনা’। ছেলে হয়ে মেয়ের মতো জীবন বেছে নেয়া হিজড়াদের জীবনসংগ্রাম উঠে এসেছে এই প্রদর্শনীতে। বর্তমানে লন্ডনে লেখাপড়া করছেন শারমিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিজড়ারা সাধারণ জীবনযাপনের সুযোগ পান বলাই চলে। তাদের শিক্ষার জন্য কোন বিদ্যালয় নেই। ধর্ম পালনের সুযোগ নেই। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের চাকরি দিতে চায় না। কয়েকজন কাজ করেন গার্মেন্টে। আর বহু হিজড়াই জড়িত পতিতাবৃত্তিতে। আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা পেতেও খুব কষ্ট হয়। তিনি আরও বলেন, আমি অন্যদের মতো বেড়ে উঠেছি হিজড়াদের মানুষের চেয়েও কম কিছু ভেবে। তাদের অভ্যাস, জীবনযাপন, এমনকি তাদের চেহারা তাদেরকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। এরপর আমি দেখা করি হেনা নামের এক হিজড়ার সঙ্গে। সে-ই আমাকে দেখিয়ে দেয়, আমি কত ভুলের মধ্যে ছিলাম। তার নিজের জীবন আমার সামনে তুলে ধরে হেনা। আমাকে তার জগতের অংশ বানিয়ে ফেলে। আমার সঙ্গে নিজে ও নিজের সমপ্রদায়ের অন্যদের চিনিয়েছিল সে। আমি তাদের একেকজনের মাঝে দেখেছি একজন মা, কন্যা, বন্ধু কিংবা প্রেমিককে। এটাই আসলে তারা। ৫১ বছর বয়সী হেনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে শারমিন পরিচিত হন হিজড়া সমপ্রদায়ের অন্যদের সঙ্গে। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় তাদের নিয়ে চিত্রপ্রদর্শনী করার। একেকজন শুনিয়েছিল নিজ নিজ জীবনের গল্প। এদের মধ্যে একজন নিশি জানিয়েছিল, সে তার স্বপ্ন পুরুষের জন্য অপেক্ষা করছে। সোনালির প্রশ্ন, কেন তাদের সমাজ মেনে নেয় না? সালমার স্বপ্ন ছিল মা হওয়ার। তাই বৈশাখী নামের এক শিশুকে দত্তক নিয়েছে সে। কিন্তু সালমা দ্বিধান্বিত, বড় হলে বৈশাখী কি তাকে মা’র বদলে বাবা বলে ডাকবে? জেসমিনের ইচ্ছা, পুরুষরা তার প্রতি সে রকম আকর্ষণ অনুভব করবে, যেমনটা তারা অন্য নারীদের প্রতি করে। প্রায় হাজার বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিতে একটি অংশ হিজড়া। কিন্তু ১৮৯৭ সালে বৃটিশরা এদের অপরাধী আখ্যা দিয়ে আইন পাস করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় হিজড়াদের। এদেরকে গণ্য করা হয় তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে। এরপর এ বছরের জানুয়ারিতে ভারতও এদের স্বীকৃতি দেয়।