অর্থনৈতিক রিপোর্র্টার | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১৭
অর্থপাচার সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধারে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশের তরফে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) একাধিক চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোন জবাব আসেনি। এব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাংকগুলো। এতে করে বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চয়তার দিকেই চলে গেল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান মানবজমিনকে জানান, সুইস ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কিন্তু কোন জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি আশা ছাড়েননি। বলেন, এমওইউ স্বাক্ষরে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এবং থাকবে। জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবি। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো সারা বিশ্বে সুইস ব্যাংক নামেই পরিচিত। সুইস ব্যাংক পৃথিবীর সব কালোবাজারির অর্থ রাখার জন্য বিখ্যাত। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালের গ্রাহক তথ্য দিয়ে ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৩’ শীর্ষক এক বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের জমা রাখা টাকার পরিমাণও উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের প্রায় ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ জমা রয়েছে। মার্কিন ডলারে যা ৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। টাকার অংকে এর পরিমাণ ৩ হাজার ১৬২ কোটি ৩৭ লাখ। অথচ ২০১২ সালে ছিল ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই বেড়েছে ১ হাজার ২৫৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতীয় নাগরিকদের জমা করা অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপি। তবে সে হিসাবে ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ বা মূল্যবান কোন সামগ্রীর আর্থিক পরিমাণ যোগ করা হয়নি। এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠে। জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টাকা পাচারকারীদের তথ্য প্রকাশ করা হবে। নড়েচড়ে বসে অর্থমন্ত্রণালয়। পাচারকারীদের তথ্য ও টাকা ফেরত আনতে প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকের তথ্য কাউকে দেয় না। শুধু যেসব দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করা আছে তাদেরকেই এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়া হয়। সমঝোতা চুক্তি করতেও উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। অবৈধভাবে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য ও পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানে একসঙ্গে কাজ করতে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাংলাদেশের পক্ষে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) গত ২৪শে জুন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগকে এ চিঠি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এগমন্ড গ্রুপের সদস্য দেশ হিসেবে এ প্রস্তাবটি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ ও অর্থপাচার রোধসহ আর্থিক খাতের দুর্নীতিসহ যে কোন ধরনের তথ্য-আদান প্রদানের জন্য গঠিত সংস্থার নাম এগমন্ড গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংক এগমন্ড গ্রুপের সদস্য। সুইজারল্যান্ডও এ গ্রুপের সদস্য দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিশ্বের ২৪টি দেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের তথ্য চেয়েও এসএনবির কাছ থেকে পায়নি পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত। তবে চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। ইউএনডিপি বা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি উন্নয়নশীল দেশ থেকে কি পরিমাণ অর্থপাচার হয় তার ওপর ভিত্তি করে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সমপ্রতি। প্রতিবেদনে ৮টি উন্নয়নশীল দেশের তথ্য তুলে ধরা হয়। তালিকা অনুসারে অর্থপাচারের দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে আইভরিকোস্ট। দেশটি থেকে বছরে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে গত বছরে গড়ে ৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার হয় সাধারণত এলসির মাধ্যমে পণ্য আমদানির সময়ে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং করে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। তবে বছরে ঠিক কী পরিমাণ টাকা বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক কোন হিসাব বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।