গাজীপুরের সালনা রেঞ্জের আড়াই একর শালবন দখল করে সেখানে লতিফ সিদ্দিকীর নামে ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার বানানোর পরিকল্পনা অবশেষে ভেস্তে যেতে চলেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পুত্র অনীক সিদ্দিকী ওই বনভূমি দখল করে সেখানে বাবার নামে গ্রন্থাগারের সাইনবোর্ড টাঙিয়েছিলেন।
গাজীপুর জেলা জজ আদালত অনীক সিদ্দিকীকে ওই বনভূমির দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে মাটি ভরাট না করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। বন বিভাগের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ শাম্মি হাসিনা পারভীন স্বাক্ষরিত ওই আদেশের অনুলিপি গত ২০ আগস্ট বন বিভাগের কাছে পৌঁছেছে। আদেশে বলা হয়েছে, বিবাদী অনীক সিদ্দিকী ৯৫ শতাংশ বনভূমি জবরদখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হুমকি দিয়ে চলে যান। গত ২৭ জানুয়ারি তিনি আবার জমিটি দখলের চেষ্টা করেন।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে হজ ও প্রধানমিন্ত্রপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করার পর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাঁর বাসভবনে একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার রয়েছে। অনীক সিদ্দিকী সালনা মৌজার সংরক্ষিত বনভূমির ওই আড়াই একর জমি দখল করে সেখানে একটি সাইনবোর্ড টাঙান। সেখানে লেখা আছে, ‘লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার’। সম্প্রতি বন বিভাগ ওই সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করে বনভূমিটি দখলমুক্ত করেছে। এর আগে গত ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর রাজেন্দ্রপুর থানায় ওই বনভূমির দখল এবং কয়েক হাজার গাছ কাটায় বন বিভাগ অনীক সিদ্দিকীর পাঁচজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে ১৪ মে বন বিভাগ একই ঘটনায় ফরিদউদ্দিন নামের আরেকজনকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, সালনার ওই মৌজাটি সংরক্ষিত শালবন। আর বাংলাদেশ বন আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া শালগাছ কাটা নিষেধ এবং সংরক্ষিত বনে প্রবেশ করতে হলেও বন বিভাগের অনুমতি লাগে। কিন্তু অনীক সিদ্দিকী ওই বনভূমি দখলের চেষ্টা করেছিলেন।
লতিফ সিদ্দিকীর অনিয়ম : আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
অনীক সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে বন বিভাগের করা মামলার অন্যতম আসামি ও বনের জমি ভরাটকারী ঠিকাদার ফরিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অনীক সিদ্দিকীর কাছ থেকে ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার পরই সেখানকার গাছ কেটে মাটি ভরাট করেন।
বন বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানাসংলগ্ন ওই জমির বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকারও বেশি। ভাওয়াল-গাজীপুর পাকা সড়কের পাশে দখল করা জমির তিন দিকেই গভীর সরকারি গজারি বন। রেকর্ডপত্র অনুযায়ী পুরো জমির মালিক বন বিভাগ। ১৯৮৪ সালে বন বিভাগ ওই জমিতে বনায়ন করেছিল।
গত বছরের নভেম্বর মাসে স্থানীয় গাজীপুর গ্রামের সলিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ উদ্দিন লোকজন নিয়ে বন কেটে জমি দখল করছেন খবর পেয়ে তৎকালীন বিট কর্মকর্তা কামরুল হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেন। ফরিদ উদ্দিন ওই জমি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর দাবি করে বন বিভাগের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এরপর ২৫ নভেম্বর ফরেস্টার কামরুল হাসান বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মন্ত্রীর লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া যাবে না বলে জানায়। পরে থানায় জিডি করেন।
১০ ডিসেম্বর লতিফ সিদ্দিকীর লোকজন আবারও বন কেটে সেখানে মাটি ফেলে দখলের সময় খবর পেয়ে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দখলকারীরা বনকর্মীদের লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। দখল ঠেকাতে না পেরে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ১২ ডিসেম্বর গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা হাকিমের আদালতে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করা হয়। ওই দিনই আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে ১৪৪ ধারা জারির নোটিশ করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই মন্ত্রীর লোকজন বনের গাছ কেটে প্রায় আড়াই একর বনভূমি দখল করে নেয়।