চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর রেললাইনের পাশে সাদা রঙের বিশাল গরুটিকে ঘিরে জটলা। একজন ক্রেতা গরুর শরীরের ওপরে-নিচে পরখ করে দেখছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দামে-দরে বনিবনা না হওয়ায় ফিরে গেলেন। এর পরও গরুটি নিয়ে কৌতূহলী লোকজনের আগ্রহের কমতি নেই। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে এর ছবি তুলে রাখছিলেন।গরুটির প্রতি এ ধরনের বিশেষ আগ্রহের কারণ এর আকাশছোঁয়া দাম। বিক্রেতা এর দাম হেঁকেছেন পাঁচ লাখ টাকা।
গতকাল শনিবার নগরের বিবিরহাট বাজারের সবচেয়ে বেশি দামের গরু ছিল এটি। চার দিন ধরে এ বাজারেই অপেক্ষায় আছেন বাঁশখালীর বিক্রেতা নুরুল আবসার। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা মেলেনি কয়েক দিনে।
হতাশ নুরুল আবসার জানান, শহরে বড় গরুর ক্রেতা কম। আগ্রহ না থাকায় একেকজন একেক রকম দাম বলে চলে যান।
এবারের ঈদে ভারতীয় জাতের ১০টি গরু বিক্রির জন্য আনেন আবসার। বাঁশখালীতে তাঁর নিজস্ব খামার আছে। এর মধ্যে তিনটি বিক্রি করেছেন বাঁশখালীর স্থানীয় পশুর হাটে। ভালোই দাম পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার সাতটি গরু এনেছেন বিবিরহাটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুর দাম হাঁকেন পাঁচ লাখ টাকা। বাকিগুলোর দাম চাইছেন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রথমে বড় গরুটির দাম হাঁকেন ১২ লাখ টাকা। এরপর ১০ লাখ। সবশেষে গতকাল পাঁচ লাখ টাকায় নামিয়ে এনেছেন। গত বুধবারের বাজারে গরুটির দাম তিন লাখ পর্যন্ত ওঠে বলে জানান। সাড়ে তিন লাখ টাকা হলে ছেড়ে দেবেন।
গতকালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা বড় গরু কেনার ব্যাপারে আগ্রহী তেমন নন। ছোট ও মাঝারি গরু বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। নগরের মুরাদপুরে থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে আসা ছগির মিয়া বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় নানা রকম ওষুধ খাইয়ে গরু মোটাতাজা করার কথা শুনে বড় গরু কেনার ব্যাপারে ভরসা পাচ্ছি না। তবু দরদাম বাজেটের মধ্যে হলে কেনার চেষ্টা করতাম।’
বাজারে ঢোকার মুখে একটি বড় গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাতকানিয়ার হারুন রশীদ। গরুটির দাম চেয়েছেন তিন লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেন না। দুই লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। হারুন গতকাল সকাল ১০টায় সাতকানিয়া থেকে ট্রাকে করে গরু নিয়ে নামেন বিবিরহাটে। আশা করেছেন, শহরের বাজারে ভালো দাম পাবেন। কারণ, সাতকানিয়াতেই এ ধরনের তিনটি গরু বিক্রি করেছেন সোয়া দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দামে। গতকাল বিকেলে হতাশ হারুন বলেন, শহরে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি মাঝারি আকারের পশুর প্রতি। বড় গরু কেনার আগ্রহ কম।
গতকাল বাজারে গরুর সরবরাহ ছিল প্রচুর। গত কয়েক দিনের তুলনায় দামও ছিল কম। পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা থেকে আসা আবদুল কাদির ৫৫ হাজার টাকা দামের একটি গরু কিনে ফিরছিলেন। তিনি জানান, আজকের বাজারে দাম ভালোই। তা ছাড়া সাগরিকা পশুর হাটের তুলনায়ও এখানে দাম কম।