বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চামড়ার ট্রাক পোস্তা ও হাজারীবাগে ঢোকার পর ছয়/সাত ঘণ্টার যানজটে থাকতে হচ্ছে বলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন।
“গরমের মধ্যে আড়তে পৌঁছাতে এতো সময় লাগায় এবার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হতে পারে,” বলেন তিনি।
এরইমধ্যে নষ্ট চামড়া পেয়েছেন বলে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আফতাব আহমেদ জানিয়েছেন।
এবার গরম পড়ায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যেই লবণ দেওয়ার ব্যবস্থা না করলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে জানিয়ে ওই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সোমবার মৌসুমি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।
পোস্তার মাহবুব অ্যাণ্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক সুরুজ মিয়া, এম এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী জুযেল, ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজের নয়ন জানিয়েছেন, তাদের গুদামে যে সব চামড়া আসছে তার মধ্যে অনেক নষ্ট চামড়া রয়েছে।
মূলত গরমের কারণেই এসব চামড়া নষ্ট হয়েছে বলে জানান তারা।
চামড়াবোঝাই যানবাহন যাতে সহজেই পোস্তা ও হাজারীবাগ এলাকায় ঢুকতে এবং সেখান থেকে বেরোতে পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
তারপরও কেন আড়তে পৌঁছাতে চামড়াবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, ট্রাক থেকে মাল নামাতে সময় নেয়ার কারণে এই যানজট দেখা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানার ওসি মইনুল ইসলাম বলেন, আড়তে যাওয়ার রাস্তা খুব সরু হওয়ায় একটির বেশি ট্রাক চলতে পারে না। তাই কোনো ট্রাক থেকে চামড়া নামানোর সময় পিছনের ট্রাকগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
তবে সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার জট অনেকটা কমে এসেছে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, মালিকপক্ষ পাঁচ শতাংশ চামড়াও নিজেদের প্রতিনিধির মাধ্যমে কেনেনি। তারা দুই/তিনদিন পর বিভিন্ন আড়তে গিয়ে চামড়া কেনা শুরু করবে।
গরমের কারণে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ততোটা নেই বলে মনে করছেন তিনি।
“এবার লবণের দাম আওতার মধ্যে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা ঠিক সময়ে ঠিকমতো চামড়ায় লবণ দিলে গরমে সমস্যা হওয়ার কথা নয়,” বলেন শাহীন আহমেদ।
এদিকে এবছর ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে বলে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা দাবি করছেন।
ব্যবসায়ীরা ও ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিরা পাড়া-মহল্লা থেকে বেশি দামে চামড়া কিনতে শুরু করায় এছাড়া তাদের ‘কোনো উপায়’ ছিল না বলে দাবি করেন একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
তাদের দাবির সত্যতা পাওয়া যায় বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর কথায়ও।
তিনি বলেন, “শুধু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া ক্রয় করছেন না। মৌসুমি ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও ট্যানারি মালিক পক্ষও বেশি দামে চামড়া ক্রয় করছে।”
প্রতিযোগিতা করে চামড়া কিনতে যাওয়ায় বেশি দাম দিতে হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
মন্টু মিয়া নামের একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী বলেন, সোমবার সকালে নয়াবাজার থেকে ১০/১২টি চামড়া ‘ঠিক’ দামে কিনেছেন। কিন্তু পরে বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে আর কোনো চামড়া কিনতে পারছিলেন না তিনি।
“আমি যে দাম বলেছি তার চেয়ে কয়েকশ টাকা বেশি দাম বলছিল অন্য ক্রেতারা। পরে বাধ্য হয়ে আমাকেও বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে।”
ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং চট্টগ্রামে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে কেনার ঘোষণা দেয়। এছাড়া সারাদেশে প্রতি বর্গফুট মহিষের চামড়ার দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ধরে দেয় তারা।
এদিকে ঢাকার অনেক জায়গায় ঈদের পরদিন মঙ্গলবারও পশু কোরবানি হওয়ায় ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পাড়া-মহল্লায় চামড়ার খোঁজ করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, এবার ঈদের তিনদিনে ঢাকায় প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ এবং সারাদেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ গরু জবাই হবে।
ট্যানারি মালিকরা সারা বছরই কম-বেশি চামড়া সংগ্রহ করলেও কোরবানির ঈদেই একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি চামড়া কেনার সুযোগ হয় তাদের। সারা বছর দেশে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত হয়, তার ৪৮ শতাংশই সংগ্রহ করা হয় এ মৌসুমে।