প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দিনভর পঞ্চশীল, অষ্টশীল, পূজা, ধর্মীয় আলোচনা, পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়, আহার-বিনোদনের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনন্দমুখর পরিবেশে ফানুস উড়িয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়।
নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে ফানুস উৎসব উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারীপুরুষের মিলনমেলা সৃষ্টি হয়। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ফানুস উৎসবের উদ্বোধন করেন।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকেই এ সম্প্রদায়ের সব শ্রেণীর লোকজনের আগমনে মুখর হয়ে উঠে নগরীর বৌদ্ধমন্দিরগুলো। এদিন সকাল থেকেই নানা উৎসবে মেতে উঠে তারা। কৃপালাভের আশায় ভক্তিভরে গৌতম বুদ্ধের চরণে মঙ্গলপ্রদীপও প্রজ্জ্বলন করেন হাজারো নারীপুরুষ।
নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারে সকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন অধ্যক্ষ ড.জ্ঞানশ্রী মহাথেরো। সন্ধ্যায় ফানুস উড়ানোর উৎসব উদ্বোধনের সময় আ জ ম নাছিরের সঙ্গে ছিলেন বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া, মহাসচিব সুদীপ বড়ুয়া এবং বৌদ্ধ যুব সমিতির সভাপতি প্রশান্ত বিকাশ বড়ুয়া।
এসময় আ জ ম নাছির বলেন, বর্তমান সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। সব ধর্মের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারে সেজন্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। দুর্গাপূজা এবং ঈদুল আযহা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। সব ধর্মের মানুষ এদেশে পূর্ণ অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারবে এটাই সরকারের অঙ্গীকার।
পাথরঘাটা জ্ব্যাতবন বৌদ্ধ বিহারে দিনভর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন অধ্যক্ষ শ্রী বোধিমিত্র থেরো।
কাতালগঞ্জ নবপন্ডিত বিহার, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারেও সন্ধ্যায় ফানুস উৎসবে বৌদ্ধ নরনারীরা মেতে উঠেন বলে জানান পাথরঘাটা জ্ব্যাতবন বৌদ্ধবিহারের উদয়ন বড়ুয়া।
এদিকে নগরীর বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে সকাল থেকেই সব বয়সি লোকজনের আনাগোনা শুরু হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মন্দিরগুলোতে। সন্ধ্যায় বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনাও করা হয়।মন্দিরে আসা লোকজনের মাঝে আনন্দের কমতি ছিল না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে উৎসবে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন বয়সের লোকেরা। ৮০ বছরের বৃদ্ধ এসেছেন ছেলের হাত ধরে ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে এসেছেন মা।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনতোষ বড়ুয়া বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমার মত একটি শুভদিনে সকলের জীবন সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক এটাই সকলের কামনা। সকলে মন্দিরে এসে এই প্রার্থনাই জানাচ্ছেন।
নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারে আসা স্কুল শিক্ষিকা শর্মিষ্টা বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারো প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ফানুস উড়ানো দেখতে এসেছি। আনন্দ লাগছে খুব। বছরের একটি দিন আমরা আনন্দের মধ্যেই কাটাই।
এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে নগরীর বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারে সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয়। সেজন্য ওই বিহারে ৫০জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মন্দির ঘিরে ১০ থেকে ১২ জনের টিম নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এছাড়া সব বৌদ্ধবিহারে ৩ জনের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।