অঢেল টাকা, তবুও নগদ টাকার সঙ্কট। ঈদের পর দুই কার্যদিবসে ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার ধার ১৫০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ সময় সুদও ছিল প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি। কয়েক বছর পর্যন্ত দৈনিক ভিত্তিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা। গত রমজানেও এ ধরনের টাকার বাজার ছিল স্থিতিশীল। হঠাৎ কোরবানির ঈদে বেড়ে যায়। এ ধরনের লেনদেন সাধারণত ঈদের আগে বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ঈদের পরও এ দৃশ্য চোখে পড়ছে। সে কারণে এ নিয়ে নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের পর গত দুই দিনে ১৫ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ সময় উভয় দিন সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বুধবার কলমানিতে ৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এসব লেনদেনে গড় সুদ হার ছিল ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ আর সর্বনিম্ন সুদ হার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। একইভাবে বৃহস্পতিবার কলমানিতে লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। সুদের হারও ছিল অভিন্ন। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২রা অক্টোবর সর্বশেষ পুরোপুরি লেনদেন করেছে। এরপর টানা ৫ দিনের ছুটির পরে বুধবার পুনরায় পুরোপুরি লেনদেনে ফেরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। জানা গেছে, ব্যাংকগুলো আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদহার কমানোর পরও তাদের কাছে এখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এর মধ্যে একেবারে অলস পড়ে আছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। উদ্বৃত্ত ও অলস এসব অর্থের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর গ্রাহক আগের হিসাব অনুযায়ী ১২ শতাংশের বেশি সুদ গুনলেও তাদের আয় আসছে ৮ শতাংশের মতো। আর অলস পড়ে থাকা অর্থের বিপরীতে কোন আয়ই করতে পারছে না তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর তারল্য আছে। কিন্তু সেটা খাতা-কলমে, বাস্তবে নয়। কারণ, সরকার তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, ব্যাংলাদেশ ব্যাংকও বিনিময়ে দিয়েছে বন্ড। সে কারণে অনেকের হাতে নগদ টাকা নেই। যদিও প্রচুর তারল্য আছে। এছাড়া গ্রাহক চাহিদা না থাকলেও ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ ঋণ মেটাতেই কলমানিতে ধার করছে বলে তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ক্লিয়ারিং হাউজে পড়ে থাকা চেকের বিল মেটাতে অনেক ব্যাংককে ধার করতে হয়েছে। অনেক ব্যাংক আগের চেক পেমেন্ট না করে হোল্ড করেছিল। কিন্তু সেগুলো এখন দিতে হবে। কিন্তু ট্রেজারিতে সমপরিমাণ নগদ টাকা নেই। সে জন্য গ্রাহকের চাহিদা না থাকলেও কলমানিতে মোট লেনদেন এখনও আগের মতো আছে। তবে আগামী সপ্তাহে এ পরিস্থিতি আর থাকবে না বলে মনে করেন তিনি। কলমানি বিষয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, বুধবার মোট ৪৩টি ব্যাংক ও ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কলমানিতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি ব্যাংক ধার করেছে, আর ধার দিয়েছে ৩২টি ব্যাংক। যেখানে ধার নেয়া ও দেয়া দুটোই করেছে ২০টি প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকগুলো মোট ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ নিয়েছে ২ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। একই দৃশ্য শেষ কার্যদিবসেও পরিলক্ষিত হয়।