ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণের (ডিমিউচুয়ালাইজড) প্রথম বছরেই কাঙ্ক্ষিত মুনাফার প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। ডিএসইর ব্যবসা পরিকল্পনা থেকে জানা যায়, সমাপ্ত অর্থবছরে ডিএসইর নিট মুনাফা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৮.৫ শতাংশ। কিন্তু মুনাফা প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৬.৮৭ শতাংশ। সুতরাং প্রথম বছরেই মুনাফার প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১.৬৩ শতাংশ কম হয়েছে। ২০১৩-১৪ সমাপ্ত অর্থবছরের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিএসই’র নিট মুনাফা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৭৫ টাকা। বর্তমানে ডিএসইর মোট ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০টি শেয়ারের ওপর ভিত্তি করে এ ইপিএস গণনা করা হয়েছে। গত অর্থবছরে (২০১২-১৩) ডিএসইর মুনাফা হয়েছিল ১১৫ কোটি ৫১ টাকা। তবে ওই সময়ে ডিএসই লিমিটেড কোম্পানি না হওয়ায় ইপিএস হিসাব করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা পরিকল্পনা থেকে আরও জানা যায়, আগামী ৭ বছরের জন্য ডিএসইর রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় গড়ে ২৪.৩ শতাংশ এবং মুনাফা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় গড়ে ২৮.৫ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে ইপিএস বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় পর্যায়ক্রমে ০.০৮ টাকা থেকে ৩.৫৫ টাকা। এ বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক জানান, এখনও নিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়নি। তবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ইতিমধ্যে ব্যয় কমিয়েছে। এ জন্য আমরা কয়েক স্তরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এমনকি আমরা মুনাফা বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগের চেষ্টা করছি। ব্যাংকগুলোতে সুদের হার কমে যাওয়ায় আমাদের মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারা অন্যতম কারণ। ফলে ব্যাংক থেকে স্থায়ী আমানতের বিপরীতে আমাদের আয় কমেছে। এ ছাড়া ডিএসইর সদস্যদের ইন্স্যুরেন্স ও ব্রোকার হাউসগুলোতে সাবসিডি দেয়ায় মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আবার প্রথম বছরের প্রথম দিকে ডিএসই ডিমিউচুয়ালাইজড না হওয়ায় মুনাফা কমেছে বলে জানান তিনি। ডিমিউচুয়ালাইজড স্কিম অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংকে ডিএসইর মোট ৮৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। ব্যাংক সুদের হার ১২ থেকে ৯ শতাংশে নেমে যাওয়ায় এ খাত থেকে ডিএসইর মুনাফা প্রায় ৩০ কোটি টাকা কমেছে। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের অন্য এক সদস্য জানান, প্রথম বছরে ডিমিউচুয়ালাইজড ডিএসইর যে মুনাফা অর্জিত হয়েছে তাতে শেয়ারহোল্ডারদের কাঙ্ক্ষিত মুনাফা দেয়া সম্ভব হবে না। শুরুতে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হতে পারে। তবে ডিএসইর ব্যবসা পরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে, মূলধন বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনে ডিএসই পর্ষদ লভ্যাংশ কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ডিএসইর এক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসন থেকে মালিকানা পৃথক হওয়ায় ডিএসই অলাভজনক থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রথম বছরে আমরা কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ আশা করছি। ডিমিউচুয়ালাইজড পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিএসইর ২৫০ জন সদস্যের প্রত্যেককে ৭২ লাখ ১০ হাজার করে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শেয়ারের অভিহিত মূল্য ধরা হয়েছে ১০ টাকা। কোম্পানির পরিশোধিত মূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে ডিএসইর ২৫০ জন শেয়ারহোল্ডারকে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হলে মুনাফা করতে হবে ১৮০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। যেখানে প্রথম বছরে ডিএসইর মুনাফা হয়েছে মাত্র ১৩৫ কোটি টাকা।