দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সন্ত্রাসবাদ ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি অনুসরণে এ সব সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব। ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ভূমিকায় মহাত্মা গান্ধীর দর্শনের অভাস পাওয়া যায়। সীমান্ত চুক্তি, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাসহ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সব অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে তা সমাধানের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ সব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে অর্থবহ আলোচনা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট আয়োজিত ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গান্ধী দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মহাত্মা গান্ধীর ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা ও ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সম্পাদক ঝর্ণাধারা চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, রাজনীতিবিদ ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের বলেন, যেখানেই সহিংসতা, দ্বন্দ্ব, উগ্রবাদ, বৈষম্য, অসাম্য- সেখানেই গান্ধীর দর্শন সফল। যে বুলেট তার প্রাণহানি ঘটিয়েছিল আজ তিনি সেই বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী। গান্ধী সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের বাতিঘর। মূল প্রবন্ধে সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার নামে সহিংসতা চলছে। কোন কোন দেশে গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র কায়েম রয়েছে। পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই সংঘর্ষ তাড়া করে চলেছে। এ অবস্থায় গান্ধী মনের ভিতরের শক্তি জাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যা শুধু জাগতিক মুক্তি দেয় না বরং চিত্তের মুক্তি দেয়। তিনি গান্ধীর অহিংসা, সত্যাগ্রহ ও সর্বোদয় দর্শন অনুসরণে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান। স্বাগত বক্তৃতায় ট্রাস্টের সম্পাদক ঝর্ণাধারা চৌধুরী আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস পালনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। বলেন, ২রা অক্টোবর গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে ২০০৭ সালে এ দিবসটিকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি পালিত হচ্ছে। পঙ্কজ শরণ তার বক্তৃতায় বলেন, মহাত্মা গান্ধী ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও তার বিচরণ ছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় জীবিত থাকলেও তার কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন। কোন ধ্বংস বা বিনাশ নয়, বরং কিভাবে সৃষ্টি করতে হয়- সেই শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন।