জাতীয় পার্টিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কোথাও নেই দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। দলের চেয়ারম্যান
সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের মধ্যে দূরত্বের কারণে নেতা-কর্মীরাও ভুগছেন হতাশায়। তারা অনেকটা দিশাহারা অবস্থায় রয়েছেন। ঈদের আগে দলের দুই নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মশিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতি ও সংসদে হাতাহাতির পর থেকে শুরু হয়েছে এ স্থবিরতা। ঈদের আগে জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসাবে পরিচিত রংপুরে এরশাদ গেলে সেখানে তার সামনেও সংঘর্ষ ঘটে। এরশাদ পুলিশ পাহারায় ঈদ করেন। ঢাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেননি তিনি। মহাসচিব হওয়ার পর জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সক্রিয় হলেও দৃশ্যত তারও কোন কার্যক্রম নেই এই মুহূর্তে। এমনকি দুর্গাপূজাতেও ছিল না দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাপার কোন দলীয় কার্যক্রম। এসব প্রশ্নে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মানবজমিনকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে সমাবেশ করে আমরা তার ফাঁসি দাবি করেছি। এছাড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপিরও কার্যক্রম নেই। আমরা ঈদের ছুটিতে এলাকায় গণসংযোগ করেছি। চেয়ারম্যান স্যার রংপুরে ঈদ করেছেন। সেখানে গণসংযোগ করেছেন। আমরা রমজানের ঈদে ঢাকায় শুভেচ্ছা বিনিময় করি। আর ঈদুল-আজহায় এলাকায় গণসংযোগ করি। বাবলু বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে দলীয় কার্যক্রম আরও জোরদার করবো। ঈদের পর কেবল অফিস-আদালত খুলেছে। জাতীয় পার্টিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে বিষয়টি এমন নয়। ওদিকে, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারও দলে অনেকটা চুপচাপ। দলীয় কার্যক্রমে তার উপস্থিতি নেই। সাবেক মন্ত্রী ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের দলীয় কার্যক্রম থেকে অনেকটা দূরে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরশাদের নেতৃত্ব নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে জাপায়। অনেকেই পার্টি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের কথা মুখে বললেও বাস্তবে অবহেলা করছেন। এ অবস্থায় কৌশলে পার্টিতে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছিলেন এরশাদ। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরিয়ে দেন ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি পদ থেকে কাজী ফিরোজ রশীদকে। প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি দেন দু’জনকে। এ সব করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি। এরশাদ দলের পদ থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বাদ দিলেও সরকারের তরফ থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি করে। তবে দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, একটি পক্ষ এরশাদকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে সহসাই আরেকটি নির্বাচন হচ্ছে! জাপা চেয়ারম্যানও কয়েকটি সভা-সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন। এমন সিগন্যাল পেয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন এরশাদ। মার্চের মধ্যে নির্বাচন করতে প্রস্তুত জাতীয় পার্টি- তিন দিনের সফরে শনিবার রংপুর পৌঁছে স্থানীয় সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর জিয়াউদ্দিন বাবলু বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদকে সমর্থন দেন। আর তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বিরোধীদলীয় হুইপ হিসেবে সমর্থন দেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বাবলু বিরোধীদলীয় উপনেতা হতে চেয়েছেন। হতে পারেননি বলে দলের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন। পার্টি চেয়ারম্যানকে উল্টাপাল্টা বোঝাচ্ছেন। এরশাদ ওই বলয় থেকে বের হতে পারছেন না। এর ফলে দল ছোট হতে হতে এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে আগামীতে নির্বাচন করার জন্য ৩০ জন প্রার্থী নেই। বিরোধী দলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীও সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন। সর্বশেষ ১৪ই সেপ্টেম্বর সংসদীয় দলের জরুরি বৈঠক করেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বৈঠকে কাজী ফিরোজ রশীদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হওয়া-না হওয়া এবং তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রেসিডিয়াম থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয় ফায়সালা হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে রওশনের মুখোমুখি হননি এরশাদ। এদিকে দলের হাইকমান্ডে বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মী বিভ্রান্ত অবস্থায় আছেন। দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী হতাশ হয়ে অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে রাখছেন। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে খ্যাত রংপুরেই এখন দলটির দুরবস্থা চলছে। এছাড়া সিলেট-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগেও অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দলটি।