মুখোমুখি সংঘর্ষের পর যাত্রীবাহী দুটি বাসের একটি মহাসড়কের পাশে ও আরেকটি পাশের খাদে গিয়ে পড়ে। এরই মধ্যে হতাহত ব্যক্তিদের কয়েকজন ছিটকে পড়েন মহাসড়কে। ঠিক ওই সময় আরেকটি দ্রুতগামী বাস তাঁদের মাড়িয়ে চলে যায়।
নাটোরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে গত সোমবারের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও হতাহত ব্যক্তির স্বজনেরা এ অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, ওই বাসটি ছিল হানিফ পরিবহনের। বাসটি মহাসড়কের ওপর পড়ে থাকা লোকদের এভাবে মাড়িয়ে না গেলে আহত ব্যক্তিদের কেউ হয়তো বেঁচে যেতেন। নিহত ব্যক্তিদের লাশও এতটা ছিন্নভিন্ন, বিকৃত হতো না।
ওই দুর্ঘটনায় নাটোরের গুরুদাসপুরের সিধুলি গ্রামের ১৪ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে আছেন ছয় সহোদর। তাই আক্ষেপ ও ক্ষোভ এই গ্রামের মানুষেরই বেশি।
প্রত্যক্ষদর্শী বড়াইগ্রামের মাড়িয়াগ্রামের রহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি তাঁর বোনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে নাটোর যাচ্ছিলেন। বাস দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষে অথৈ পরিবহনের ভেতরে ও ছাদে থাকা অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন ছিটকে মহাসড়কের ওপর পড়ে যান। কাউকে কাউকে কাতরাতে দেখা যায়। এরই মধ্যে হানিফ পরিবহনের একটি বাস তাঁদের ওপর দিয়ে দ্রুত চলে যায়।
নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে সোহেল নামের এক যুবকও একই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানিফ পরিবহনের বাসটি হতাহত ব্যক্তিদের ওপর দিয়ে চলে যায়। মহাসড়কে মানবদেহের ছিন্নভিন্ন টুকরা পড়ে থাকে।
স্থানীয় নজরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার পর আশপাশের মানুষ মহাসড়কের দিকে দৌড়ে আসতে থাকেন। তাঁর ধারণা, মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ক্ষতি করতে পারে, এই ভয়েই হানিফ পরিবহনের বাসের চালক দ্রুত সরে যেতে গিয়ে এ কাজ করেছেন।
গুরুদাসপুরের সিধুলি গ্রামের শরিফ উদ্দিন সরকার (৩২) এ দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর ফুফাতো ভাই দুলাই প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইও আহত হয়ে মহাসড়কে পড়েছিলেন। হানিফ পরিবহনের বাস তাঁকে পরে চাপা দিয়েছে। মৃতদেহের শরীর-মাথা থেঁতলে গিয়েছিল। নাড়ি-ভুঁড়িও বেরিয়ে এসেছিল। পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করেন তাঁরা।
দুর্ঘটনার পর দায়িত্ব পালন করা বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মাহবুর রহমানের কাছে এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি জানি না।’
জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মানুষ পশু হয়ে গেলেও তো এ কাজ করতে পারে না।’