বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এতোদিন জনগণের স্বার্থে অপেক্ষা করেছি, এখন নতুন কর্মসূচি দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আগে সারা দেশে আন্দোলন হয়েছিল। ঢাকায় পিছিয়ে ছিলাম। এবার সবাইকে আন্দোলন করতে হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে এত অপকর্ম করেছে, ক্ষমতা ছাড়লে কি পরিণতি হবে তা তারা নিজেরাই জানে। তাদের গায়ে আমাদের হাত দিতে হবে না। ক্ষমতা ছাড়লে দেশের জনগণই গণধোলাই দেবে। ক্ষমতা না ছাড়লে মানুষই একদিন অতিষ্ঠ হয়ে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবে। গতকাল রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন- খুনিদের সঙ্গে নাকি আলোচনা করবে না। কিন্তু শেখ হাসিনার ডানে-বামেই তো খুনি। খুনিদের সঙ্গেই তিনি কাজ করছেন। একপাশের এরশাদ অন্যপাশে ইনুকে রেখেছেন। দুইজনই খুনি। তিনি বলেন, সবাই আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হবে। আর আওয়ামী লীগ একঘরে হবে। আমাদের পায়ের তলায় মাটি আছে বলেই আমরা যেখানে সমাবেশ করছি সেখানে বিপুল মানুষ অংশ নিচ্ছে। ডিসি-এসপি দিয়ে মানুষ আনতে হচ্ছে না। সরকার দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দিচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকারের লোকেরা পদে পদে দুর্নীতি করছে। তাদের এই দুর্নীতির জন্য একদিন জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু এটা জেনেই দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দিচ্ছে সরকার। দুদক আমাদের লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আর দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দিচ্ছে। শুধু সার্টিফিকেট দিলেই কাজ হবে না। আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের একদিন সাজা ভোগ করতে হবে। উপজেলা চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। কিন্তু এখন যারা ক্ষমতায় তারা কেউ নির্বাচিত নয়। তারা আপনাদের কাজ দিচ্ছে না। তাদের নেতাকর্মীদের কাজ দিচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব কি তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে আপনারা এমনি এমনি আসেননি, ভোটে জিতে এসেছেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে আপনাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেবো এবং জবাবদিহিতা নেবো। খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। কারণ সরকার তাদের দিয়ে নানা আকাম-কুকাম করাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত খুন-গুম করছে। এরা কি বাংলাদেশের মানুষ আজ সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খালোদ জিয়া বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। বিচারপতিদের যে রায় বলে দেয়া হচ্ছে তারা সেই রায় দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা একুটু সাহসী বিচারক তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অভিশংসন আইন করা হয়েছে। তাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হচ্ছে। অবস্থা এমন, ভাল মানুষ সব জেলে ভরা হচ্ছে আর দাগি-ফাঁসির আসামিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। আজ আওয়ামী লীগ মানে সুফি আর বিরোধীরা সব অপরাধী। বিএনপি চেয়ারপারসন আন্দোলনের ব্যাপারে বলেন, মানুষ আমাদের বলছে, আপনারা আন্দোলন করছেন না। আওয়ামী লীগ বলেছিল- ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়মরক্ষার। কিন্তু তারা সেকথা রাখেনি। চেয়ারে বসে এখন আর নামতে চাচ্ছে না। আমরা সরকারকে ১০ মাস সময় দিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে, আমাদের আবারও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, মামলা সবার আছে। গুম-খুনও প্রতিনিয়ত হচ্ছে। গত আন্দোলনের জেলাগুলো সফল হয়েছিল। আমরা তাদের ধ্যনবাদ জানাই। আমরা সেবার ঢাকায় পিছিয়ে ছিলাম। এবার সবাইকে আন্দোলন করতে হবে। তিনি বলেন, আগে মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদের মনোভাব বুঝে কর্মসূচি দিলে আন্দোলন সফল হবে। মতবিনিময় সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মে. (অব.) এম হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দদু, এড. জয়নাল আবদিন, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, মসিউর রহমান, বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল হুদা, সম্পাদক সাবেরুল ইসলাম সাবু, কুষ্টিয়ার মেহেদী আহমেদ রুমী, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মেহেরপুরের আজমাদ হোসেন ও আমীরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার ওহিদ বিশ্বাস ও মাহমুদ হাসান বাবু, মাগুরার কবির মুরাদ, বাগেরহাটের এমএ সালাম, আলী রেজা, সাতক্ষীরার মোহাম্মদউল্লাহ, নড়াইলের বিশ্বাস জাহাঙ্গীর, খুলনার শফিকুল আলম মনাসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের শতাধিক পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অংশ নেন।