বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের জুন মাসে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল।
আশরাফুল তার এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করেন। আর সে পরিপ্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। ৮ বছরের স্থানে ৫ বছর করা হয় তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ। কিন্তু তার মূল স্থগিতাদেশ দুই বছরের। সে অনুসারে আশরাফুল তিন বছর পরই ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট শেষ হবে তার নিষেধাজ্ঞা।
অবশ্য তার আগেও ফিরতে পারেন তিনি। কারণ, দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণায় আইসিসিকে সহায়তা করা ও ভালো আচার-ব্যবহারের জন্য শাস্তির মেয়াদ আরো কমে যেতে পারে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ এই ক্রিকেটারের। সবকিছু ছাপিয়ে আশরাফুল নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই বলেছিলেন তিনি যেকোনো মূল্যে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে চান। নিষেধাজ্ঞা কমানোর পরও একই কথা জানিয়েছিলেন। তবে ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে ফিট থাকাটা খুব জরুরি। অনুশীলন, শারীরিক কসরত করার পাশাপাশি থাকতে হয় খেলার মধ্যেও। আর সেটা করতেই আশরাফুল বর্তমানে রয়েছেন আমেরিকায়।
সেখানে নিয়মিত অনুশীলনের পাশাপাশি প্রতি শনিবার খেলছেন শৌখিন ক্রিকেট। সেটা অবশ্য তার আইনজীবীর পরামর্শেই। আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী কোনো বোর্ডের অধীনে ক্রিকেট না খেললে তার নিষেধাজ্ঞা শর্ত লঙ্ঘন হবে না। বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ আশরাফুল বিভিন্ন দিক নিয়ে অডিও বার্তায় কথা বলেন বিবিসি বাংলার মাঠে ময়দানে অনুষ্ঠানে।
নিউ ইয়র্কে তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘সপ্তাহে এক দিন খেলছি। এই খেলায় রিয়াল ওই কম্পিটিশনটা পাচ্ছি না। কিন্তু তারপরও খেলতেছি। বেশ ভালোই লাগছে। সপ্তাহের বাকি ছয় দিন দেখা যাচ্ছে রানিং করছি, জিমে যাচ্ছি। এ ভাবেই সময় কাটাচ্ছি। আমি ফিট হতে চাচ্ছি আর কি। যখনই আমি আর একটা সেকেন্ড চান্স পাব। তখন যাতে আমি খেলতে পারি। সেটার জন্যই আসলে এখানে আসা।’
তার আইনজীবীর পরামর্শের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আইনজীবীর পরামর্শ অনুসারেই খেলছি। বিসিবি ও আইসিসির নিয়মানুযায়ী কোনো বোর্ডের আন্ডারে না হলে যেকোনো ক্রিকেট আমি খেলতে পারব। এই খেলাটা হলো জাস্ট প্র্যাকটিসের মধ্যে থাকা আর কি। ১৬-১৭ মাস হলো আমি খেলাধুলার মধ্যে নাই। এটার জন্যই খেলছি আর কি।’
শৌখিন ক্রিকেট কেমন লাগছে, সে বিষয়ে অ্যাশ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই লাগছে। খারাপ না। কারণ, খেলাটাই হলো আমার জন্য মেইন। গেল ১৮ বছর ধরে আমি অন্যকিছু করিনি। শুধু খেলাধুলাই করেছি।’
এখনো আশরাফুলের কোটি কোটি ভক্ত চায় তারকা এই ক্রিকেটার আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসুক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটা ভেবেই তৈরি হচ্ছি। যখনই হোক। আমি যেন এসে আবার খেলতে পারি। তখন আমি যেন আমার সেরাটা দিতে পারি। কারণ, আমি আমার সেরাটা এখনো বাংলাদেশকে দিতে পারিনি। আশা করছি আমি দেশকে আরো ভালো কিছু দিতে পারব আর কি।’
শৌখিন ক্রিকেটে নিজের ফর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘খারাপ না, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হচ্ছে। ব্যাটিং ভালোই হচ্ছে।’
ফেরার ব্যাপারে কতখানি আশাবাদী প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। যেহেতু আমি ব্যাটসম্যান। তাই আমাকে ফিট থাকতে হবে। আমার এখন বয়স ৩০। আমি অবশ্যই আশা করব যেন সুস্থ থাকি। আশা করি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারব। এখন দেখা যাক আল্লাহ কি রাখছেন কপালে।’
ফিটনেসের বিষয়ে আশরাফুল বলেন, ‘আমরা ফিটনেস তো অবশ্যই ওই লেভেলে নাই, ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের ক্রিকেট খেলতে যেটা দরকার হয়। নিজেকে ফিট রাখতে মোটামুটি চেষ্টা করছি। কারণ, এখনো তো আমি জানি না কবে নাগাদ ফিরতে পারব। এ কারণে পুরোপুরি ফিট হতে পারছি না। তারপরও মোটামুটি আছে। খারাপ না, ভালোই।
আশরাফুল যখন ফিরে আসবেন (২০১৬ সালে) তখন তার বয়স হবে ৩২ বছর। এই বয়সে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়াটা খুব কঠিন কিছু নয়। অনেকেই ৪০ বছর পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেন। সে ক্ষেত্রে ফর্ম ও ফিটনেস ধরে রাখতে হয়। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের একসময়কার আশার ফুল সব বাধা পেরিয়ে আবারও ক্রিকেটে ফিরতে পারেন কি না।
সূত্র : রাইজিং বিডি, বিবিসি বাংলা