ঈদ ও পূজার রেশ নিয়ে শরৎকাল শেষ হলেও অক্টোবরের প্রথম দিকেই ঘটে গেল বিভিন্ন রকম নৃশংস ঘটনা। প্রতিনিয়ত আতংক আশংকা ভীড় করে আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। দিনদিন এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে হচ্ছে না এর কোন প্রতিকার । দৈনন্দিন জীবনে দুর্ঘটনা এখন নিত্য নৈমেত্তিক ব্যাপার। অক্টোবরের/২০১৪ পুরো মাস জুড়েই ঘটে গেছে নির্মম ও নৃশংস ঘটনা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মনিটরিং এ পাওয়া তথ্য, উপাত্ত থেকে দেখা যায়, এ মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে সর্বমোট ৯৪০ টি, বিভিন্ন ঘটনার শিকার হয়েছে সর্বমোট ৩৪১১ জন । সারাদেশে পৃথক ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সর্বমোট ৭৭৬ জনের এবং আহত হয়েছে ২৩৯৭ জন।
এ মাসে এসিড নিক্ষেপ ঘটনা অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশী । এসিড নিক্ষেপে আহত ১০ জন । জামালপুর সদরে এসিড ছুড়ে এক গৃহবধূর শরীর ঝলসে দেয়া হয়েছে। পারিবারিক জের ধরে তার দেবর ও ননদ তাকে লক্ষ্য করে এসিড ছুড়ে। অন্যদিকে নরসিংদীতে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন এক দম্পতি। মাদারীপুরে প্রেমিকের দেয়া এসিডে দগ্ধ হয়ে তরুনীর মৃত্যু।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬২ জনের এবং আহত হয়েছে ৪০৯ জন। উল্লেখ্য, নাটোরে ঘটে গেল বড় ধরনের এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা নাটোর ঢাকা মহাসড়কে যাত্রীবাহী ২টি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩২ জন নিহত ও ১২ জন আহত। চালকের অসতর্কতা, মানুষের অসচেতনতা, সর্বোপরি সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।
সামাজিক সহিংসতায় নিহত ২৮ জন ও আহত হয়েছে ১২৭০ জন। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে ০৫ জন এবং আহত হয়েছে ২৯৫ জন। উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনে এক আন্তঃসত্ত্বা নারীর ৫ মাস বয়সের সন্তানের গর্ভপাত ঘটে।
নারী পুরুষ সহ পারিবারিক ও অন্যান্য কারণে কলহের ফলে নির্যাতিত হয়ে নিহত হয়েছে ৬১ জন এবং আহত হয়েছে ৩১ জন। পারিবারিক কলহের ফলে ভোলার চরফ্যাশনে এক গৃহবধূকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। রাজধানীর ডেমরায় মায়ের অনৈতিক সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ার ও বাধা দেয়ায় নিজ সন্তানকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোাগ করে খুন করে মা ও তার প্রেমিক।
যৌতুকের বলি হচ্ছে প্রতিনিয়তই কোন না কোন নারী । এ মাসেও তার ব্যতিক্রম নেই। সারাদেশে যৌতুকের জন্য জীবন দিতে হয়েছে ১০ জন নারীকে এবং নির্যাতনে আহত হয়েছে ১১ জন নারী। যৌতুকের জন্য শ্বাসরুদ্ধ থেকে শুরু করে সিগারাটের আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়া এবং আগুনে ঝলসে দেবার মত ঘটনাসহ নানা অমানুষিক নির্যাতন এর শিকার হয়েছে নারীরা। নরসিংদীতে এক গৃহবধুকে যৌতুকের জন্য তার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির পরিবার তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা করে। কিশোরগঞ্জে বিয়ের মাত্র দেড় বছরের মাথায় যৌতুকের বলি হলেন অন্তঃসত্ত্বা এক নারী।
বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ২৯ জন নারী ও ২৪ জন পুরুষ। বখাটেদের অত্যাচার, মোবাইল ফোনে কু-প্রস্তাব এবং এক পর্যায়ে হোটেল নিয়ে ধর্ষণ করে। ২য় বার হুমকি দেওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় কোহিনুর নামের এক গার্মেন্টস কর্মী। বগুড়াতে এক ছাত্রীর অশ্লীল ছবি ইন্টারনেট ছেড়ে দেওয়ায় এক কলেজ ছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।
এ মাসে ১৪ জন শিশু এবং ১৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ১২ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪ জনকে। উল্লেখ্য, লক্ষীপুরে বাবা মাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মেয়েকে ধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। ধর্ষনের হাত থেকে তরুনী থেকে শিশু পর্যন্ত অনিরাপদ এবং প্রতিনিয়ত ধর্ষনের শিকার হচ্ছে তারা। এর সাথে এই অস্থির সমাজে যোগ হয়েছে ছেলেরাও। সভ্যতার কোথায় যেয়ে আমরা পৌছেছি। কেরানীগঞ্জে ১০ বছরের মাদ্রাসা ছাত্রকে একই মাদ্রাসার বাবুর্চি শিশুটিকে জোর করে ধর্ষণের (বলাৎকার) চেষ্টা করে এবং শিশুটি বাধা দেয়ায় তাকে বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে উত্তরায় বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে এক কিশোরকে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যা করে এক আলজেরীয় নাগরিক। এছাড়াও যৌনহয়রানির শিকার হয়েছে ১২জন।
গৃহকর্মী সহ অন্যান্য অমানুষিক নির্যাতন এর শিকার ১০১ জন। নির্যাতনের পর নিহত হয়েছে ৪৭ জন এবং আহত হয়েছে ৫৪ জন।
ছিনতাইকারী, দুর্বৃত্ত এবং সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে ৮০ জন ও আহত হয়েছে ১১৭ জন। টাইঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় ৩ মেয়েসহ এক মাকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এক বখাটে। বখাটে প্রস্তাবে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় এই নারকীয় হত্যাঘটনা ঘটে।
এ মাসে একই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অজ্ঞাত ও রহস্যজনক কারণে মৃত ২২ জন নারী ও ৪২ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে ০২ জন। এছাড়া, নিখোজ রয়েছে ১১ জন। অপহরণের শিকার হয়েছে সর্বমোট ২০ জন । এর মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ০৬ জন নারী ও ০১ জন শিশু। নারায়নগঞ্জে সোনারগাঁয়ে ৪জনকে অপহরন করে দুজনের হাত পায়ের রগ কেটে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতে একজনের মৃত্যু হয়ে আরেক জনের অবস্থা আশংঙ্কা জনক।
বোমা বিষ্ফোরণে নারী পুরুষ শিশুসহ আহত ৩২ জন। এছাড়া পুলিশ হেফাজতে ০৪ জনের মৃত্যু। বিএসএফ এর গুলিতে ০৬ জন নিহত, ০৬ জন আহত এবং আটক হয়েছে ০৩ জন। চিকিৎসকের অবহেলায় একমাসে ১০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সাংবাদিকের উপর হামলায় আহত হয়েছে ০৫ জন। গণপিটুনীতে নিহত হয়েছে ১০ জন এবং ক্রসফায়ারে ১৭ জনের মৃত্যু। একমাসে অন্যান্য দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু হয়েছে ১৫৭ জনের। শ্রমিকের অসন্তোষে আহত ১০৭ জন। এ মাসে পাচার কালে উদ্ধার হয়েছে থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলের বন্দিদশা থেকে ১২২ জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, জমি দখল, মন্দির ও বাড়িঘরে ভাংচুড় ও লুটপাটের অভিযোগ ও পাওয়া গেছে। । ময়মনসিংহে এক গ্রামে হিন্দু পল্লীতে সাত বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
(তথ্য সুত্রঃ অক্টোবর ২০১৪ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভন হয়নি)