মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের এক ডাকসাইটে অভিনেতার নাম আবুল হায়াৎ। ১৯৬৯ সালে ‘ইডিপাস’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয় তার। এরপর অসংখ্য নাটক, চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সিক্ত হয়েছেন দর্শক ভালবাসায়। নিয়ে গেছেন নিজেকে অন্য এক উচ্চতায়। অভিনয়ের এ চিরসবুজ অভিনেতা এখনও অবিরাম অভিনয় করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নির্মাণেও রয়েছে তার সুখ্যাতি। বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি মানবজমিন-এর মুখোমুখি হন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন মারুফ কিবরিয়া
এখন ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
প্রচার চলতি বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ‘লোটাকম্বল’, বিন্দুবিসর্গসহ আরও কয়েকটিতে অভিনয় করছি। এর পাশাপাশি বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে সাগর জাহানের রচনা ও জামান মল্লিকের পরিচালনায় ‘স্বপ্ন’ এবং রওনক হাসানের রচনা ও আশিকুর রহমানের পরিচালনায় ‘আকাশ চুরি’ ধারাবাহিক নাটক দুটি। এগুলোর শুটিং নিয়েই এখন বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। এছাড়া এক খণ্ডের নাটকে কাজ করার কথা রয়েছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক নির্মাণও করেন। সেটার কি অবস্থা?
সামনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি নাটক নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। নাটকটির নাম ‘সাক্ষাৎকার’। এতে অভিনয় করবেন তৌকীর আহমেদ ও সুবর্ণা মুস্তাফা। নাটকটি আসছে বিজয় দিবসে প্রচারের লক্ষ্যে নির্মাণ করবো। আগামীকাল থেকে নাটকটির দৃশ্যায়ন শুরু করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দীর্ঘদিনের অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। এতে প্রাপ্তি কতটুকু?
আমার অভিনয় জীবন থেকে প্রাপ্তির বাকি কিছু নেই। দীর্ঘদিনের এ পথচলা থেকে সবই পেয়েছি। অভিনয়ের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের কাছ থেকে যে ভালবাসা পেয়েছি তা একজন মানুষের জন্য কম কিসের? আমার জীবনে যা পেয়েছি তার সবই ইতিবাচক।
আপনি তো মঞ্চ দিয়ে শুরু করেছিলেন…
১০ বছর বয়সে মঞ্চে অভিনয় শুরু করি। এখনও মনে পড়ে, সেই ছোট বয়সে থেকেই বন্ধুরা মিলে একটি দল গঠন করি, মঞ্চ তৈরি করি। সেখান থেকেই তো শুরু। তখনই অভিনয়টাকে হৃদয়ে লালন করি।
অভিনয়ের জন্য মঞ্চটা কতটুকু জরুরি বলে মনে করেন?
মঞ্চ হলো অভিনয়ের আঁতুড়ঘর। এখান থেকে অভিনয় শিখে যাওয়া শিল্পীরা জীবনের যে কোন পর্যায়ে গিয়ে ভাল অবস্থান করতে পারবেন বলেই আমি মনে করি। একজন শিল্পীর জন্য মঞ্চ হলো আদর্শ জায়গা। কারণ, মঞ্চে শুধুই অভিনয় শেখানো হয় না। এখানে নিয়ম, শৃঙ্খলা থেকে সবই শেখানো হয়। তবে মঞ্চ ছাড়াও যে ভাল শিল্পী তৈরি হওয়া যায় না সেটা বলাটাও কিন্তু ঠিক নয়। এখন অনেকেই মঞ্চে কাজ না শিখেও ভাল অভিনয় করছেন এবং এ জায়গাটায় নিজেকে ভালভাবে মেলে ধরছেন।
এখনকার টিভি নাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
টিভি নাটক যা হচ্ছে খারাপ হচ্ছে না। ভালই করছেন সবাই। এখন তো অনেক টিভি চ্যানেল। সে কারণে নাটকও প্রচুর নির্মাণ হচ্ছে। তাই বলা যায়, খারাপ কিছু কাজ থাকলেও সে সঙ্গে ভালটাও হচ্ছে। আর অনেক কাজের মধ্যে ভাল-মন্দ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
ভাল গল্পের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রায়ই শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনি কতটুকু একমত?
একটি ভাল নাটক নির্মাণ করতে একটি গল্প অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু নাটকে এখন আর আগের মতো ভাল গল্প খুব একটা পাওয়া যায় না। যে কারণে গল্প নিয়ে ইদানীং অনেক প্রশ্ন উঠেছে। দর্শক মহল থেকেও অনেক সময় এ নিয়ে কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর আগেও বলেছি। এখানে মূল সমস্যা বাজেট। এ কারণেই মূলত ভাল গল্প নেই বলে অভিযোগ অনেকের। একটি ভাল গল্পে নাটক নির্মাণের জন্য যে বাজেট দরকার তা পাওয়া যায় না।
বাজেট সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি?
এখন বাজেটের পুরো ব্যাপারটি দেখবে চ্যানেলগুলো। দর্শক চাহিদা অনুযায়ী ভাল নাটক নির্মাণ যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে সেটা সংখ্যায় খুব কম। এ জন্য বাজেট বাড়ানোর ব্যাপারে সবার আগে চ্যানেলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আর সবাই যদি এ সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে এগিয়ে আসেন অচিরেই সমস্যা কেটে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
অনেক ছোটগল্প, উপন্যাস
লেখনীতেও আপনার জনপ্রিয়তা রয়েছে। নতুন কিছু কি লিখছেন?
অভিনয় ও নির্মাণের পাশাপাশি যতক্ষণ থাকি তার বাইরে লেখালেখির পেছনে সময় দিয়ে থাকি। লিখে যাচ্ছি। সামনের বইমেলায় একটি উপন্যাস বের করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত তো লিখছিই।
প্রকৌশলী হয়েও অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন…
আমি বুয়েট থেকে পাস করে প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে লালন করে আসা অভিনয়ের নেশাটা যেন আমাকে পিছু ছাড়ছিল না। আমাকে অভিনয়ই বারবার টেনেছে। সেখানেই নিজের আনন্দ-সুখ সবই খুঁজে পেতাম। তাই এ জগৎটাকেই আঁকড়ে ধরেছি। এখনও আছি।
নতুনদের কেমন লাগছে?
নতুনরা আমার দৃষ্টিতে ভালই করছেন। তাদের অনেকেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে নতুন এ শিল্পী-নির্মাতাদের সঠিক পথে পরিচালনা করা জরুরি। সিনিয়রদের সবার কাছ থেকে যদি সহযোগিতা পান তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে বলেই আমি মনে করি।
সামনের পরিকল্পনা কি?
এক জীবনে অভিনয় থেকে তো সব পেলাম। এখন আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। যে কাজটির সঙ্গে এতটা সময় আছি সেটা নিয়েই থাকতে চাই। আমৃত্যু অভিনয় করে যেতে চাই। আল্লাহ আমাকে যতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন ততদিন যেন অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে পারি সেটাই কামনা করি। আর একটি আত্মজীবনী লিখছি। এরই মধ্যে অনেকটা লেখা হয়ে গেছে। আশা করি শিগগিরই এটি শেষ করবো।