গোলমাল করে দেশের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, গোলমালকারীরা গত ৮ মাসে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। তবে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নানাভাবে বিনিয়োগের সুযোগ আছে এটা কাজে লাগাতে হবে। বিনিয়োগ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এসএমই ব্যাংকিং অ্যাওয়ার্ড ও এসএমই ফাইন্যান্সিং ফেয়ার-২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘এসএমই-তে অর্থায়ন নগর গ্রামে উন্নয়ন’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাই (এসএমই) অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তিনি বলেন, সেমাই থেকে শুরু করে উৎপাদনের সবকিছুর প্রাণশক্তিই এসএমই খাত। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে এ খাত। অর্থনীতিতে সম্পদ বাড়াতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, ক্ষুদ্রঋণে বিকাশ ঈর্ষণীয়। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে, এটা স্বীকার করতে হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দু’টি বিভাগ, ব্যাংকিং এবং নন-ব্যাংকিং ঠিক আছে। অর্থনীতিতে সম্পদ বাড়াতে গেলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ উৎপাদনই অর্থনীতির বড় কর্ম। নগরীর জনদুর্ভোগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাস্তা বড় আছে, কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থা খারাপ। অর্থ খরচ করে ট্রাফিক সিগন্যালের বাতি লাগানো হয়েছে। অথচ এর বেশিরভাই বিকল। কেউ ট্রাফিক সিগন্যাল মানে না। এর জন্য দায়ী যানজট ব্যবস্থাপনা। যেটি অত্যন্ত দুর্বল, যা দুঃখজনক। তিনি বলেন, ট্রাফিকের শৃঙ্খলা আনতে পারলে ট্রাফিক সমস্যা নিরসন হবে। ৩০ মিনিটের রাস্তায় হয়তো ৪৫ মিনিট লাগবে কিন্তু দেড় ঘণ্টা কেন লাগবে তার কারণ বের করতে হবে। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কেএম হাবিব উল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, এফবিসিসিআই সভাপিত কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. সৈয়দ মো. ইহসানুল করিম, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। ড. আতিউর রহমান বলেন, সমপ্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের বাজারে যে মন্দা ছিল তা কাটতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি যদি স্থিতিশীল থাকে, সরকারের নীতিমালা আনুকূল্যে থাকে তাহলে বিনিয়োগে অবস্থা আরও ভাল হবে। তিনি বলেন, বছরে শ্রম বাজারে নতুন ২০ লাখ চাকরি প্রার্থীর অর্ধেক দেশ ও বিদেশের শ্রম বাজারে চাকরি পাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথোপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করতে হবে। নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করব যাতে এসএমই লোন স্বল্প সুদে দেয়া হয়। গভর্নর বলেন, সহায়ক জামানত প্রদানে অপরাগতা, ব্যবসায় দক্ষতার অভাব, ঝুঁকি মোকাবিলায় সীমিত সামর্থ্য, ব্যবসায়িক সাফল্য সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ ও প্রদানে সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে বড় বাধা। ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সহায়ক জামানত দিতে অপারগতা আজকের উদ্যোক্তা ভবিষ্যতে বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো কোন মাল্টিন্যাশনাল ব্যবসায়ের অধিকারী হতে পারেন। তাই সুচিন্তিতভাবে তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক মূলধন যোগানে এগিয়ে আসতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে হলেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।