খলিলুর রহমান, কিশোরগঞ্জ থেকে ঃ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকার ও সংসদ অবৈধ। বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে ভোটারবিহীন এবং বিনা ভোটে তারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। দেশের জনগণ তাদের ভোট দেয় নাই। আন্দোলনের মাধ্যমে এই এবার নব্য মির্জাফরদের বিদায় করবো। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবো। কিশোরগঞ্জের স্মৃতি ধন্য মহাবীর ‘ঈশা খাঁর কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। সরকারের বেশি অত্যাচার হলে ঢাল-তলোয়ার আছে, এটা নিয়েই মোকাবেলা করব। হাসিনার সরকার র্যাব দিয়ে অপহরণ করে ইলিয়াসসহ অনেক মানুষকে গুম করে হত্যা করেছে। কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে গতকাল বুধবার বিকেলে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ বাহিনী জেলের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে অভিযোগ করে বেগম জিয়া বলেন, র্যাব বাহিনী সরকারের মানুষ হত্যা করার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তিনি র্যাব বাতিলের দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, কয়েকশ গুণ করে বেড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের সম্পদ। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা এখন সবচেয়ে ক্ষমতাধর।
দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নেই বলে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে জনগণের নির্বাচিত সরকার নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ভোটকেন্দ্রে কুকুর বসেছিল। তাহলে কী করে তারা নিজেদের নির্বাচিত সরকার দাবি করে। এ সময় সংসদ সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন দাবি করে দশম সংসদকেও অবৈধ বলে আখ্যা দেন বেগম জিয়া। তিনি বলেন, আগামী দিনে আপনাদেরকে আন্দোলনের ডাক দেব। আপনারা বিগত দিনের মতো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন।
খালেদা জিয়া বলেন, যে জাতি শিক্ষায় যত বেশি অগ্রসর সেই জাতি তত উন্নত। সে লক্ষে বিএনপি সরকার মেয়েদের বিনা বেতনে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। তিনি বলেন, ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের টাকা লুটপাট করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। পুলিশ দিয়ে এখন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। খুন, গুমসহ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের কোনো নেতা কর্মী কথা বললে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তিন লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ এখন অপর মানুষের জমি দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। অন্যায় করেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিচারের উর্ধ্বে রয়েছে। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। সরকারি দলের কেউ দূর্নীতি করলে সরকারের দূর্নীতি দমন কমিশন তাদের দায় মুক্তি দিচ্ছে। দূর্নীতি দমন কমিশন এখন দায় মুক্তি কমিশনে পরিণত হয়েছে।
মিডিয়া ও বিচার বিভাগের কথা উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সরকারের বিচার বিভাগের অধীনে বিরোধী দলীয় কোনো নেতাকর্মী বিচার পাচ্ছে না। দেশ দুই ধরণের বিচার চলছে। এ থেকে প্রমাণ হয় দেশে আইনের শাসন নেই। তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না, দেশের মানুষ আমার কাছে বড়, আমি আপনাদের কাছে থাকতে চাই। তাই দেশের তৌহিদী জনতাকে নিয়ে আজ আল্লাহ্র কাছে এই জালেম সরকারের বিচার চাই।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম. ওসমান ফারুক, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার আ.স.ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ্ আমান, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন।
২০ দলীয় জোট নেতাদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলী আহমদ বীর বিক্রম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যপক মুজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব খান, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহীম বীর প্রতীক।
স্থানীয় নেতাদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চ্ন্নুু, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আবদুস সালাম, সেক্রেটারী অধ্যাপক রমজান আলী, জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা ছাইদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাওলানা আবুল কাশেম, জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ্ জামী প্রমুখ।