আমাদের ধারণা, শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা আহত হতে হলে ছোট-বড় কোন ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। আসলে বসে থাকার মতো আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ একটি কাজের মাধ্যমেও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হওয়া সম্ভব। ভয় পেয়ে গেলেন?
বিবর্তনের ধারায় মানুষের শরীর এমনভাবেই তৈরি হয়েছে যাতে আমরা সবসময়েই নড়াচড়ার মাঝে থাকতে পারি। এ কারণে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শরীরের ক্ষতি হওয়াটা অনিবার্য। অফিস শেষে বারি গিয়ে অনেক সময়েই আপনি বুঝতে পারেন না ঠিক কি কারণে আপনার মাথা ধরে আছে অথবা পিঠের ব্যাথায় নড়াচড়া করতে পারছেন না। দেখে নিন বসে থাকার কারণে কিভাবে আপনার ক্ষতি হচ্ছে এবং কী কৌশলে এই ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারেন আপনি।
সমস্যার কারণ- আপনি সম্ভবত কুঁজো হয়ে বসে আছেন, অথবা আপনার চেয়ারের উচ্চতা ঠিক নেই।
সমাধান- আপনার চেয়ার ঠিক করে নিন যাতে আপনার মেরুদণ্ডের নিচের অংশের বাঁক সেখানে ভর দিতে পারে এবং যথেষ্ট সাপোর্ট পায়। চেয়ারের সিট এমনভাবে ঠিক করুন যাতে তা নিচের দিকে অল্প একটু ঝুঁকে থাকে। আপনার হাঁটু এবং সিটের শেষ প্রান্তের মাঝে এক-দুই আঙ্গুলের ব্যবধান থাকা উচিত। এ ছাড়াও পিঠের নিচের অংশকে সাপোর্ট দেবার জন্য কুশন ব্যবহার করতে পারেন।
সমস্যার কারণ- আপনি যদি কুঁজো হয়ে বসেন তবে এ সমস্যা হতে পারে। যথেষ্ট নড়াচড়া না করলেও এ ব্যাথা হতে পারে।
সমাধান- বসা অবস্থা থেকে উঠে হাঁটাচলা করুন। সম্ভব হলে প্রতি ২০ মিনিট পর পর নড়াচড়া করুন। মাথা, ঘাড় এবং কাঁধ স্ট্রেচ করুন। পিঠ বাঁকা করে ছাদের দিকে দৃষ্টি দিন, আরাম পাবেন। সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব।
সমস্যার কারণ- বেশি দ্রুত এবং শক্তি প্রয়োগ করে টাইপ করতে গেলে এ সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম থাকলে এ সমস্যা দেখা দেয়।
সমাধান- আপনার কীবোর্ড যদি উঁচু করা থাকে তবে এর পেছন দিকের স্ট্যান্ডটা খুলে এটাকে টেবিলের ওপর ফ্ল্যাট করে রাখার ব্যবস্থা করুন। চেয়ার এমনভাবে রাখুন যাতে আপনার দুই কনুই সমকোণের কাছাকাছি অবস্থানে থাকে।
সমস্যার কারণ- ঘাড় এবং কানের মাঝে ফোন ধরে রেখে কথা বলা, কুঁজো হয়ে কাজ করা এবং ঝুঁকে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা (এসব কারণে ঘাড় ব্যাথার পাশাপাশি চোয়াল বা মাথাব্যাথাও করতে পারে)।
সমাধান- টাইপিং এবং ফোনে কথা বলার কাজটি একই সময়ে করতে গেলে স্পিকার, হেডফোন বা হেডসেট ব্যবহার করুন। এমনভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিন অ্যাডজাস্ট করুন যাতে আপনার চিবুক স্ক্রিনের মধ্যভাগ বরাবর থাকে।
সমস্যার কারণ- চেয়ার যদি আরামদায়ক না হয়, আপনি যদি পা ক্রস করে বেশ সময় বসে থাকেন অথবা আপনার সিট এতো উচু হয় যে পা ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে, তবে হাঁটু ব্যাথা করতে পারে।
সমাধান- চেয়ার এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করুন যাতে পা আরামদায়ক অবস্থানে থাকে। নিতম্ব ব্যাথা সমাধানের জন্য যেভাবে চেয়ার ঠিক করে নিতে হয়য়, সেই একইভাবে এক্ষেত্রেও চেয়ার ঠিক করে নিতে পারেন। চেয়ার উচু হবার কারণে যদি পা মেঝে পর্যন্ত না পৌছায় তবে পায়ের নিচে একটি টুল রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। আর হাঁটু ক্রস করে না বসে বরং গোড়ালি ক্রস করে বসতে পারেন।