গুগল বাস প্রকল্পের উদ্বোধনে বাংলাদেশে এসেছিলেন গুগলের এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের হেড অব এমার্জিং মার্কেটস জেমস ম্যাকক্লুর। বাংলাদেশে গুগলের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আপাতত গুগলের কান্ট্রি ম্যানেজার নিয়োগ হচ্ছে না।
জেমস ম্যাকক্লুর ২০১০ সালের আগস্টে গুগলের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের হেড অব এমার্জিং মার্কেটস হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি ২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত গুগলের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও এশিয়া প্যাসেফিকের হেড অব সেলস ফিন্যান্স পদে ছিলেন। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ইউরোপ ও আফ্রিকায় গুগলের সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট ছিলেন। ২০০৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত অর্থার ডি লিটলের মিডিয়া অ্যান্ড টেলিকমের বিজনেস অ্যানালিস্ট ছিলেন। তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন আইবিএম কর্পোরেশনে। ইমাজিং মার্কেটিং ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কিছুদিন সুইডেনেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন টেক শহরের প্রতিবেদক আল আমীন দেওয়ান।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে গুগল বাস প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর। ৩৬৫ দিনে ৫ শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি মাত্র বাস দিয়ে কিভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে পারে?
জেমস ম্যাকক্লুর: এমন প্রশ্ন আসতেই পারে যে ৩৬৫ দিনে ৫ শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিভাবে কর্মশালার আওতায় আসবে। আসলে আমাদের একটি যুতসই পরিকল্পনা আছে। এছাড়া এক দিনে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুগল বাস যাবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে কাজী মনিরুল ইসলামকে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি থাকা অবস্থায় গুগল বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে থাকে। সম্প্রতি তিনি বিদায় নিয়েছেন। এই জায়গায় নতুন নিয়োগ কবে হবে?
জেমস ম্যাকক্লুর: হ্যা এটা সত্যি। কাজী মনিরুল কবিরের হাত ধরে গুগল বাংলাদেশের সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর। গত দুই বছর গুগলের নানান অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি কানাডা চলে গেছেন। তবে আপতত বাংলাদেশে কোন কান্ট্রি ম্যানেজার নিয়োগের পরিকল্পনা নেই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে গুগল স্ট্রিট ভিউয়ের কার্যক্রম কতদূর এগিয়েছে? কবে নাগাদ এটি উন্মুক্ত হবে?
জেমস ম্যাকক্লুর: স্ট্রিট ভিউ প্রকল্পে ঢাকার বাইরে প্রধান প্রধান শহরগুলোর সাথে প্রায় ১০০ টি ঐতিহাসিক এবং পর্যটন এলাকাও রয়েছে। কার্যক্রম চলছে। আশা করছি ২০১৫ সালের এপ্রিল ও মার্চের মধ্যে তা উন্মুক্ত করা যাবে।
প্রশ্ন: বিতর্কিত একটি চলচ্চিত্রের কারণে ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে অনেক দিন বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের ইউটিউব সার্ভার থাকলে শুধু ঐ চলচ্চিত্রটি মুছে ফেলে ইউটিউব চালু রাখা যেতো। বাংলাদেশে ইউটিউব সার্ভার বসানোর কোন পরিকল্পনা আছে কি?
জেমস ম্যাকক্লুর: গুগল বাংলাদেশ সরকারের সাথে যৌথ উদ্যোগে ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রসারের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমারা স্ট্রিট ভিউ প্রকল্প, গুগল আউটরিচ প্রোগ্রাম, গুগল বাসসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সংযুক্ত রয়েছি। ইউটিউব সার্ভারের বিষয়টি আমাদের ভাবনায় আছে, তবে তা অদূর ভবিষ্যতে নয়।
প্রশ্ন: গুগল বিজনেস গ্রুপ (জিবিজি) বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের বেশ সফলতা দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে এই গ্রুপের আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে কি?
জেমস ম্যাকক্লুর: বাংলাদেশে জিবিজি কার্যক্রম বেশ ভাল হচ্ছে। ঢাকায় দুটি আছে। চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরও গ্রুপ করার পরিকল্পনা আছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে গুগলের সর্বশেষ সংযোজন গুগল বাস প্রকল্প বিষয়ে বলুন?
জেমস ম্যাকক্লুর: গুগল বাসের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ওপর প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এরফলে অংশগ্রহণকারীরা স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত ও বিভিন্ন সার্কেলের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি ইন্টারনেটের উপযোগিতা, শক্তি ও সুফল সম্পর্কে জানতে পারবেন। একই সাথে তাঁরা গুগলের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ব্যবহারের কলাকৌশল জানার সুযোগ পাবেন। সব মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে তাঁদের জ্ঞানের পরিধি নতুন মাত্রা পাবে।
প্রশ্ন: তথ্য প্রযুক্তির বাংলাদেশ নিয়ে গুগলের মূল্যায়ন?
জেমস ম্যাকক্লুর: বাংলাদেশ হলো এমন এক দেশ যেখানে সম্ভাবনাময় বিশাল তারুণ্যের শক্তি রয়েছে। যারা দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে সমাজের এই উৎসাহী-উদ্যমী ও প্রাণচঞ্চল তরুণ শক্তিই একদিন ইন্টারনেটের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতার চূড়ান্তে পৌঁছবে। খুব শীঘ্রই প্রযুক্তিভিত্তিক গ্লোবাল ভিলেজ বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে স্থান করে নেবে।