অনিবার্য কারণ নয় সুনির্দিষ্ট কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন যুক্তরাজ্য ও ইতালি সফর বাতিল করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্দি-জ্বরে ভুগছেন এবং চিকিৎসকরা তাঁকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই তিনি লন্ডন ও রোম সফর বাতিল করেছেন এবং লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মসূচিগুলো স্থগিত করা হয়েছে।
কিন্তু একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল করা হয়েছে বলে বিবৃতি দিলেও মূলত অবৈধতার প্রশ্নেই এ সফর বাতিল করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, ১৬ থেকে ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য ও ইতালি সফরের কথা ছিল। এর মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর অক্সফোর্ড ইউনিয়নে বক্তৃতা দিতে তাঁর লন্ডন সফর এবং ১৮ থেকে ২০ নভেম্বর পুষ্টিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে রোম সফরের কথা ছিল। শেখ হাসিনার এই সফরটি খুবই গোপনীয়তার সাথে আয়োজন করা হয়েছিল।
অনুসন্দানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সফরের লক্ষ্য ছিল ৫ই জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের প্রপাগান্ডা ক্যাম্পেন এবং যুক্তরাজ্য সরকারের সমর্থন আদায় করা কিংবা ফটো সেশন করে আন্তরিকতা ও সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের বৈধতা রয়েছে বোঝানোর চেষ্টা করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা তদবির করেও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন কিংবা সরকারের কোনো মর্যাদাশালী মন্ত্রী এমপির সাথে সাক্ষাত পেতে ব্যর্থ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল আলোচিত। কেননা শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আগমনকে প্রতিহত করতে যুক্তরাজ্য বিএনপি এবার বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল।
অনুসন্দানে আরও জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৭ তারিখে অক্সফোর্ড ইউনিয়নে যে বক্তৃতা দেয়ার কথা ছিল সেটি মূলত অক্সফোর্ড ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেনি। এটা মূলত যুক্তরাজ্যস্থ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের সমন্বয়ে আয়োজন করা হয়েছিল অক্সফোর্ড ইউনিয়নের হল ভাড়া করে।
এ প্রসঙ্গে অক্সফোর্ড ইউনিয়নের প্রেস সেক্রেটারি ড্যান ভেলেন্টাইন এর সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়; শেখ হাসিনা অক্সফোর্ড ইউনিয়নে অথিতি হিসাবে আমন্ত্রিত কিনা। জবাবে ড্যান প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, অক্সফোর্ড ইউনিয়নে যারাই আসবে সবাই আমন্ত্রিত।
এছাড়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট বেনজামিন সুলিভান এবং সেক্রেটারি ন্যাম ফুঙ দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি তারা। আমাদের অনুসন্দানে জানা যায়, শেখ হাসিনার অক্সফোর্ড ইউনিয়নের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানের বিষয়টি ছিল খুবই গোপনীয়। কিন্তু খবরটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পরেছে অক্সফোর্ড ইউনিয়ন। একের পর এক অভিযোগপত্র জমা হয় ইউনিয়নের অভিযোগ বক্সে। এসব অভিযোগে বলা হয় অক্সফোর্ড ইউনিয়ন একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন। কিন্তু শেখ হাসিনা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তাই বৈধতার প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ প্রধানমন্ত্রীকে অক্সফোর্ড ইউনিয়নে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হলে অক্সফোর্ড ইউনিয়ন ইমেজ সংকটে পরতে পারে। অভিযোগকারীরা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ইতিপূর্বে লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স এ লিবিয়ার সাইফ আল গাদ্দাফিকে একটি অনুষ্ঠানে অথিতি করাতে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছিল। এল এস সি ইমেজ সংকটে পরেছিল। এসব বিষয় বিবেচনা করেই অক্সফোর্ড ইউনিয়ন শেখ হাসিনার এই অনুষ্ঠানটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।
ডেভিড ক্যামেরোনের সাক্ষাত না দেয়ার কারণটিও ছিল আমাদের দেশের জন্য লজ্জাজনক। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে শেখ হাসিনা ফটো সেশনে মিলিত হয়ে তার ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়, যে কারণে ব্রিটিশ সরকার প্রধানমন্ত্রীকে সাক্ষাত দিতে বিব্রতবোধ করছে।
শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে লন্ডন সফরে গিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু বরাবরই লন্ডন সফর শেষে ঢাকা ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগনের আই ওয়াশ করার চেষ্টা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ২০১১ সালের সফর নিয়ে বাংলাদেশের পত্রপএিকা, টেলিভিশন চ্যানেলে নিত্য খবর প্রচার ও প্রকাশ হলেও এ সফর থেকে অর্জন কতটুকু সেটি প্রধানমন্ত্রীই ভালো জানেন। তবে সাদাচোখে বৃটেনের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতের তালিকা এবং দেশের প্রচারমাধ্যমে সফরের কভারেজের বিচারে দেখলে সফল বলা চলে। কিন্তু সত্যিকারের অর্জন কিংবা বিসর্জন কতটুক সেটি মুল্যায়ন করবেন কুটনীতিকরা। তবে বৃটেনের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে ‘সাক্ষাতকার ম্যানেজের’ নেপথ্যে রয়েছে মজার কাহিনী। এইসব কাহিনী এখন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে মুখরোচক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটি সবাই জানেন, পুরষ্কার কিংবা পদক গ্রহনের ব্যাপারে শেখ হাসিনা বরাবরই উদার। এ ক্ষেএে অনেক পুরষ্কারদাতা এবং সংগঠনকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত করানোর দাবীও প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন। ২০১১ সালেও যুক্তরাজ্য সফরে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। মহা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে গ্লোবাল ডাইভারসিটি এওয়ার্ড ২০১১ গ্রহন করেছেন। দ্যা নেক্সট স্টেপ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারী সংগঠন শেখ হাসিনাকে এই পুরষ্কার দেয়। সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশেষ অবদানের জন্য এর আগে বিগত কয়েক বছরে এই পুরষ্কারটি অনেকেই পেয়েছেন, তবে তারা প্রায় সবাই ছিলেন শিল্পী ও অভিনেতা। বেসরকারী সংগঠন নেক্সট স্টেফ ফাউন্ডেশন ২০১১ সালে একজন প্রধানমন্ত্রীকে পুরষ্কার দেয়ার কৃতিত্ব দাবী করতে পারে। একইসঙ্গে সংগঠনটি বাংলাদেশের জনগনের কাছেও এই সংগঠনটি পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
২০১৪ সালের জুলাই মাষে প্রধামন্ত্রী হাসিনা সফর সঙ্গীর এক বিশাল বহর নিয়ে লন্ডনে এসেছিলেন গার্ল সামিট ২০১৪ এ যোগ দিতে। ব্রিটিশ সরকার ও ইউনিসেফের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো এই সামিটে অংশ নেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারের প্রতিনিধি ও এনজিওর প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোন দেশ থেকে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান সমপর্যায়ের কেউ উ্পস্থিত হননি। শেখ হাসিনা সমস্ত লাজ লজ্জা প্রটোকল ভেঙ্গে কেন এসেছিলেন তার প্রেক্ষাপট ভিন্ন, শেখ হাসিনার কাছে উপলক্ষ ছিল গার্ল সামিট, লক্ষ্য ছিল ক্যামেরুন আর ক্যামেরা। সফরকালে ক্যামেরোনের সাথে ২০ মিনিটের সাক্ষাত পেতে সচেষ্ট হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ডেভিড ক্যামেরোনএর কাছে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নয়নে মতপ্রকাশে স্বাধীনতা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দানে সকলের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে তার ব্যর্থতা স্বীকার করে তা উত্তরোণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু দেশে ফিরে জনগণকে কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ সরকার তাদের ওয়েবসাইটএ তা প্রচার করে দিলে শেখ হাসিনার মিথ্যাচার জনগনের কাছে প্রমান হয়ে যায়।