শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দল ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলে তার জন্য নিরেট সমর্থন রয়েছে ভারতের। এ ছাড়া এখানকার রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় দেশের ভেতরে যদি তার বিরুদ্ধে গণ-অসন্তোষ সৃষ্টি না হয় তাহলে বাইরের চাপের কাছে মাথা নত করবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনলাইন ফরেন পলিসি জার্নালে লেখা এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন নিউ ইয়র্কের দ্য ক্যাপিটাল এক্সপ্রেসের সম্পাদক বি. জেড খসরু। ‘শেখ হাসিনাস ওয়ার অন ইউনূস অ্যান্ড ইউএস’ শীর্ষক ওই লেখায় তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশে সৃষ্ট রাজপথের রাজনৈতিক লড়াই থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরেছেন। এতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের সুবিধা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় নির্ধারিত নির্বাচনের জন্য তার দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ছিল না বললেই চলে। ফলে তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, তার পদক্ষেপের ফলেই ওই সময় বাংলাদেশে সেনাবাহিনী আসার পথ করে দিয়েছে। দৃশ্যত রাজপথের লড়াই কখনও শেষ হবে না- বাংলাদেশের রাজনীতিকে এমন লড়াই যখন ২০০৬ সালের শেষের দিকে গ্রাস করে তখন জাতিসংঘ সেনাবাহিনীকে সতর্কতার সঙ্গে প্রশাসনিক হাল ধরার জন্য সামনে এগিয়ে দেয়। কোন সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের এমন পদক্ষেপ তার নিজস্ব সনদের বরখেলাপ। ওই নিবন্ধে তিনি আরও বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেন শেখ হাসিনা লড়াই শুরু করেছেন তার দু’টি মিথ চালু আছে। এর একটি হলো- সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে দু’নেত্রীকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাতে সমর্থন ছিল ড. ইউনূসের। কিন্তু সে কারণে হাসিনার মনে দাগ কাটেনি। আসল কথা হলে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ। সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পরই তিনি রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দেন। তবে তা অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়েছিল। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বিরোধী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য তা হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। তাই ধারণা করা হয় যে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা দেখা যায় না এমন এক কূটনৈতিক এক লড়াই শুরু করেন। তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উৎখাতে তিনি এ লড়াই করেন এবং ২০১১ সালে তা করেই ছাড়েন। একই রকমভাবে আরও একটি মিথ আছে যে, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীরা তাকে বলে থাকতে পারেন যে, ড. ইউনূস ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে অর্থ দান করেছেন। এ জন্য ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এ কারণে হতাশ হন শেখ হাসিনা। এ জন্যই তিনি বলেছিলেন, নিজেকে প্রমোট করার জন্য ইউনূস যে কোন কিছু করতে পারেন। এ ছাড়া ড. ইউনূস যখন এক বিবৃতিতে বলেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ৮ কোটি ৫০ লাখ সদস্য শুধুই এ দেশের নাগরিক নন। তারা ভোটারও। এতে হাসিনা বিরক্ত হন। এটাকে আওয়ামী লীগের ব্যালট বাক্সের জন্য বিরাট এক হুমকি হিসেবে দেখা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতাকে সেনাবাহিনীর কিছু জুনিয়র কর্মকর্তারা হত্যা করে সপরিবারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অসন্তোষ রয়েছে হাসিনার। তিনি এখনও গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এর বিরোধিতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশটি বাংলাদেশের ওই সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ওই অভ্যুত্থানে তার পিতা নিহত হন সপরিবারে। তবে বিদেশে থাকার জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। একবার বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন- আওয়ামী লীগের অনেক সদস্য এখনও বিশ্বাস করেন যে, তার পিতা হত্যার জন্য ওয়াশিংটন দায়ী। তিনি উইলিয়াম বি মাইলামের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ১৯৯১ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া ঠেকাতে চেয়েছিল কিনা যুক্তরাষ্ট্র। তার পিতাকে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন মাইলাম। তিনি আরও বলেন, যদি শেখ হাসিনার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়, তাহলে তাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা দেখিয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ায় তা বর্জন করে বিএনপি। এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার জন্য ও বিএনপিকে তাতে আনার জন্য হাসিনার ওপর চাপ বাড়াতে থাকে ওয়াশিংটন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরনো বিশ্বাস আরও গাঢ় হয়। তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র এখনও তার প্রতি বিরূপ। এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অন্য ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভুল করছে ওয়াশিংটন। নতুন নির্বাচন দেয়ার জন্য ওয়াশিংটন নয়া দিল্লিকে বোঝাবার চেষ্টা করেছে। তবে ভারত হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করলে তাদের নিজেদের লাভ হবে এমনটাই দেখছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করছে বাংলাদেশে স্থিতিশীল একটি গণতন্ত্র প্রয়োজন। তাতে কে ক্ষমতায় তা দেখার নয়। ওই নিবন্ধে বি. জেড খসরু বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিশ্রুত পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের প্রসঙ্গ এনেছেন।