আখের গোছাতে ব্যাস্ত পুলিশ : বিজিবি’র নীরব ভূমিকা
জিসান আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর অঞ্চল। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। ফেনসিডিল, গাজা, হেরোইন, ইয়াবা, দেশি-বিদেশি মদ এমন কোন মাদক নেই যা দর্শনায় পাওয়া যায়না। মাদকের সহজলভ্যতার কারনে যখন চুয়াডাঙ্গার যুব সমাজের অব¯’া শোচনীয় পর্যায়ে ঠিক তখনই আখের গোছাতে ব্যাস্ত পুলিশসহ নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত ¯’ানীয় প্রশাসনের ব্যাক্তিবর্গগন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর থেকে ১৮ কিঃমিঃ দূরে অব¯ি’ত দর্শনা পৌর অঞ্চল। দামুড়হুদা থানাধিন এই অঞ্চলে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক রেল বন্দর। রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল কেরু এন্ড কোম্পানী।
সীমান্ত পাশ্ববর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ভারতীয় বিভিন্ন মদ, ফেনসিডিল। শুধু মাত্র মদ ও ফেনসিডিল নয় গাজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদকের প্রাপ্তি¯’ান এই দর্শনা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জেলা সদর চুয়াডাঙ্গা ও পাশ্ববর্তী জেলার উঠতি বয়সি যুবকেরা মটর সাইকেলসহ ¯’ানীয় বিভিন্ন যানবাহনে করে চলে আসে দর্শনা পৌর অঞ্চলের আকুন্দবাড়িয়া, ইশ্বরচন্দ্রপুর, জয়নগর, বেগমপুরও উথলিসহ দর্শনার পাশ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে। উল্লেখিত গ্রামগুলোতে সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মাদকের বিকিকিনি। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে উঠতি বয়সি যুবকেরা উল্লেখিত গ্রামগুলোর বিভিন্ন মাদক বিক্রেতার বাড়িতে গিয়ে খুব সহজে গ্রহন করছে মাদক। যেন মাদকের মেলা বসেছে।
দর্শনা অঞ্চলে যখন মাদকের জয়জয়কার, তখন আখের গোছাতে ব্যস্ত ¯’ানীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ প্রশাসন। জেলা ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে মাদক ব্যাবসায়িদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা আদায়ের অভিযোগ। সঠিক সময়ে মাসিক চাঁদা দিতে না পারলে মাদক ব্যাবসায়িদেরকে গ্রেপ্তারের ভয় ভীতি দেখানোরও অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক মাদক ব্যাবসায়ি বলেন, ডিবি পুলিশ প্রতি মাসে তাদের কাছ থেকে ৫০০০/= থেকে শুরু কওে ৫০০০০/= টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। কেউ এ ব্যবসা ছেরে দিলেও ডিবি পুলিশকে মাসিক টাকা দেওয়া লাগে সব সময়। ফলে মাসিক টাকা দেওয়ার জন্য হলেও ই”ছা থাকা সত্তেও কেউ মাদকের ব্যবসা ছাড়তে পারেনা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ফারুক জানান, ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। পূবে ডিবি পুলিশের অব¯’া যেমনই থাকুক না কেন বর্তমানে এ ধরনের কোন অভিযোগ ওঠার কোন সুযোগ নেই।
সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বিজিবি’র বিরুদ্ধে উঠেছে দায়িত্বে অবহেলা ও মাদক ব্যবসায়িদের প্রতি নীরব সমর্থনের অভিযোগ। এক বছর আগেও দর্শনা ইশ্বরচন্দ্রপুর বিওপি’র হাবিলদার জিল্লুর রহমান থাকাকালে মাদকের যে নিয়ন্ত্রন দেখেছে সমগ্র দর্শনাবাসী এখন তার বিন্দুমাত্র দেখছেনা দর্শনাবাসী। রয়েছে বিজিবি’র তথ্যদাতাদেরকে সোর্সমানি না দিয়ে আটককৃত মাদকের অংশ ভাগ দেওয়ার অভিযোগ। ফলে তথ্যদাতাদেরকে যে মাদক দেওয়া হয় তা ঠিক পূর্বের ন্যয় বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টির নীরব সমর্থনের অভিযোগও উঠছে বিজিবি’র বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মনিরুজ্জামান আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, সীমান্তে মাদক নিয়ন্ত্রনে চুয়াডাঙ্গা বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলে। যদি কোন বিজিবি জোওয়ানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাব¯’া নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন তথ্যদাতাদের জন্য চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন প্রতিমাসে প্রায় ২৩ লক্ষ্য টাকা খরচ করে থাকে।
এদিকে মাদকের সহজলভ্যতার কারনে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরসহ পাশ্ববর্তী অঞ্চলে বেড়েছে চুরি ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। সন্ত্রাস ও ফৌজদারি অপরাধ দমনে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের সাফল্য যখন ঈর্শ্বনীয় ঠিক তখনই মাদকের ভয়াবহ ছোবলের কারনে ম্লান হয়ে পরেছে সেই সাফল্য।
দর্শনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম জানান, সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে আয় করে সর্বো”চ ৩০০ টাকা। সেখানে সারাদিনে ৫ পিচ ফেনসিডিল বিক্রি করলে লাভ হয় ৪০০ টাকা। ফলে খেটেখাওয়া মানুষেরা ক্রমেই এই মাদকের ব্যাবসার প্রতি উৎসাহিত হয়ে পড়ছে। প্রশাসনের উচিত যত দ্রুত সম্ভব সৃষ্ট পরি¯ি’তি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা। তা নাহলে পরবর্তিতে আরো ভয়াবহ পরি¯ি’তির সৃষ্টি হতে পারে।
¯’ানীয় সুশীল সমাজের দাবি, দর্শনা শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে মাদকের এই অভয়ারন্যকে প্রশাসন যত তারাতারি উৎপাটন করতে পারবে এই অঞ্চলের যুবক সমাজ তত তারাতারি ভয়াবহ এক অন্ধকারা”ছন্য পথ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।