বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মূল কারণ জানা গেল না। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বর্ধিত সময়ও শেষ। কিন্তু কোন স্থান থেকে ঘটনার সূত্রপাত তাও জানা যায়নি। ধারণার ওপর ভিত্তি করেই দেওয়া হচ্ছে প্রতিবেদন। তিনটি সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। কারিগরি ত্রুটি, দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধতা এবং নির্দেশ পালনে অবহেলা। ভবিষ্যৎ বিপর্যয় এড়াতে সঞ্চালন লাইন উন্নত করাসহ ২০টি সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিটি।
১ নভেম্বর সারাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির বর্ধিত সময় শেষ হয়েছে রোববার। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, রোববার তদন্ত কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেছেন। আজ সোমবারও বৈঠক হওয়ার কথা আছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী দেশে আসার পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কমাতে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের সফটওয়্যার যুগোপযোগী করাসহ ২০টি সুপারিশ করছে তদন্ত কমিটি।
এ ছাড়া কারিগরি, ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি গাফিলতিতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ থাকছে না। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, মাঠ পর্যায়ের সব তদন্ত শেষ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকেও সব তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি সব তথ্য বিশ্লেষণ এবং দায়িত্ব পালনকারী সবার মতামতের ভিত্তিতে তিনটি ত্রুটি ধরা পড়েছে। প্রথমত, কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হতে পারে, দ্বিতীয়ত, দায়িত্ব পালনকারীরা দায়িত্বে ছিলেন কি-না এবং তৃতীয়ত, দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তার কথা অন্যরা পালন করেছে কি-না। এখানে তিন ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা পাওয়া গেছে।
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পর্যায়ক্রমে দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা, কারিগরি সব ব্যবস্থার উন্নয়ন করা এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ডিজিটাল করার পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নে সুপারিশ করবে। তদন্ত প্রতিবেদনে দেশের সঞ্চালন ব্যবস্থার কোথায় কী ধরনের ত্রুটি রয়েছে তাও তুলে ধরা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি কোথায় উদ্ভব হতে পারে তাও বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) ২০০৯ সালে কাজ শুরু করলেও ২০০৬ সালে এর নকশা করা হয়। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল তিন হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। পুরনো ব্যবস্থার কারণে এই বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৪০ বছরের পুরনো কেন্দ্র থেকে। এ ছাড়া গ্রিড এবং সাব স্টেশনের অনেকই মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরনো। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তথ্যও দ্রুত পাওয়া যায় না।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার সময়সীমা সেকেন্ডে নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু ১ নভেম্বর ঘটনা ঘটেছে মিলি সেকেন্ডে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাত্র ৫ মিলিসেকেন্ডে এ ঘটনা ঘটে যায়। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার এত বড় সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত নয়।