ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গাড়ির ধাক্কায় তৌহিদুর রহমান টিটু নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে ৩০টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে অন্তত ২০জন আহত হয়েছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের প্রায় সব বাসে আগুন দিয়েছে তারা। প্রশাসন ভবনসহ প্রায় সব ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিহত টিটুর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের খালিশপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল আজিজ, মা তাহমিনা বেগম। তারা চার বোন, দুই ভাই। সে তার বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান।
বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুর ১২টার দিকে তৌহিদ ক্যাম্পাস থেকে ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা সাগর নামের গাড়িটিতে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু উঠতে ব্যর্থ হয়ে তিনি নিচে পড়ে যান। গাড়ির পেছনের চাকার নিচে পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ দিকে ঘটনার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা মেইন গেট ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। পরে খবর পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সব শিক্ষার্থী এসে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলেন।
এঘটনায় প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষতি হলেও প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাউকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। নিহত ছাত্রের লাশ উদ্ধারেরও প্রয়োজন মনে করেননি প্রশাসনের কেউ। লাশ ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ এবং কলা অনুষদের সামনে একটি ভেনের উপর পড়েছিল দীর্ঘক্ষণ। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লাশ নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. মামুনুর রহমান বলেন, “বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ও ভাড়াকরা ৩০টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ১০টি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে।’ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক বলেন, “টিটু আমার খুব প্রিয় ও মেধাবী ছাত্র ছিল। সে এভাবে আমাদের কাঁদিয়ে চলে যাবে কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তার মৃত্যুতে আমরা বাকরুদ্ধ।”
তিনি আরো জানান, ক্যাম্পাসের ভাড়া করা প্রায় প্রত্যেক বাসের চালাকসহ হেলপাররা খুবই রূঢ় স্বভাবের। তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেই পাত্তা দেয় না। ক্যাম্পাস সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য নিজস্ব বাসের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার প্রিয় ছাত্র হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, “অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনায় যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। আর নিহত ছাত্রের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শোকাহত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে এ ঘটনার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। “প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
কমিটির সদস্যরা হলেন- প্রফেসর ড. রুহুল কে এম সালেহ, প্রফেসর ড. ইকবাল হোছাইন, প্রফেসর ড. মাহবুবুল আরেফিন, প্রফেসর ড. আব্দুস শাহিদ মিয়া, উপ-রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।”
এদিকে বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে বাস মালিক সমিতি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নসহ জেলার পাঁচ শ্রমিক সংগঠন অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করেছে। রবিবার দুপুর থেকে কুষ্টিয়ার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
তাই সোমবার সকাল ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলা হলেও ধর্মঘটের কারণে কোনো যানবাহন চলাচল না করায় তারা চরম বিপাকে পড়ছেন।