এনায়েত মজুমদার,চাঁদপুর প্রতিনিধি-০
চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা আজ ১ ডিসেম্বর সোমবার বিকাল ৩টা থেকে শুরু হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারো মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অঙ্গীকারের সামনে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলার আয়োজন করা হয়। আজ থেকে মেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে। এদিন সকালে মেলা উদ্বোধন করবেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী এবং চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। এই বিজয় মেলা চাঁদপুরবাসীর প্রাণের মেলা। শুধু এই জেলাই নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও মানুষ চাঁদপুরের বিজয় মেলায় আসে। প্রতিদিন হাজারো মানুষের মিলন মেলা ঘটে এই মেলায়।
ডিসেম্বর বাঙালির মুক্তির মাস, বিজয়ের মাস। এ মাসকে ঘিরে প্রতি বছর চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। এবার এ বিজয় মেলার গৌরবের ২৩ বছর পূর্তি হচ্ছে। আজ বিকেল ৩টা থেকে মেলার কার্যক্রম শুরু হবে। সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে মেলা কার্যক্রমের সূচনামূলক সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা থাকবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং মেলার কর্মকর্তা ও উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যায় মেলার কার্যক্রমের সূচনামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর শহর পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। সেদিন চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী মানুষেরা বিজয়ের উল্লাসে উল্লাসিত হয়েছিলো। সেই ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসকে স্মরণে রেখেই এ দিন চাঁদপুরের মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা করা হয়। এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দুই পর্বে আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্ব সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আর দ্বিতীয় পর্ব বিকেলে আলোচনা সভা।
মেলার স্টলসহ পুরো মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুতি হয়েছে। কথা হয় মেলার মাঠ ও মঞ্চ ব্যবস্থাপনা পরিষদের আহ্বায়ক হারুন-আল-রশীদের সাথে। তিনি জানান, চাঁদপুরের বিজয় মেলা সারাদেশের মধ্যে একটি মডেল। দেশের বিভিন্ন জায়গার মেলায় বিভিন্ন ধরনের জুয়ার বোর্ড, লটারীর বোর্ড বসে। কিন্তু চাঁদপুরের বিজয় মেলা শুরু থেকে এসব মুক্ত। পুতুল নাচও হয়ে থাকে পরিচ্ছন্ন ও মৌলিক। তিনি জানান, এবার মেলার অভ্যান্তরে ১শ’ ৩৭টি স্টল এবং মেলার গেটের দু পাশে রাস্তাার দিকে মুখ করে ২২টি মিনি স্টল থাকবে। স্টলগুলোতে মৃৎ ও কুটির শিল্পের সামগ্রী, প্রসাধনী, পোশাক, জুতা, কসমেটিক্স সামগ্রী, ফুল ও আরো বিভিন্ন দেশীয় পণ্য থাকবে। আরো থাকবে শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও পুতুল নাচ। মেলা মঞ্চের পাশেই থাকবে মুক্তিযুদ্ধের স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর জন্য বড় আকারের স্টল। যেখানে পলাশী থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত স্থিরচিত্র প্রদর্শন এবং জাতীয় জাদুঘর থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত স্থিরচিত্রের ভলিয়ম সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শিত থাকবে। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে মেলার কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যার পর চাঁদপুরসহ দেশখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ এবং বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের পরিবেশনায় নাটক মঞ্চস্থ হবে।
মেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মেলার মহাসচিব অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরন জানান, পুরো মেলা প্রাঙ্গণসহ মেলার বাইরে আশপাশও সিসি ক্যামেরায় বন্দী থাকবে। গত বছর ৮টি সিসি ক্যামেরা ছিলো। আর এবার থাকবে ১২টি সিসি ক্যামেরা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে আহ্বায়ক করে আইনশৃঙ্খলা কমিটি রয়েছে। এ কমিটিতে পুলিশ বিভাগের আরো একাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত (মেলার কার্যক্রম শেষ হওয়া) পর্যন্ত মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ এর নেতৃত্বে একাধিক এসআই এবং পুলিশ লাইনের ইন্সপেক্টরসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য এবং ডিবি পুলিশ মেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মী এবং মেলার নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক মিলে প্রায় ৫০ জন নিরাপত্তার নানাদিক দেখাশোনা ও মনিটরিং করবেন। এককথায় বলতে গেলে পুরো মেলা অঙ্গন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে।