রাজশাহী মহানগরীতে সোনালী ব্যাংক কোর্ট শাখায় সুড়ঙ্গ করে ডাকাতির চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে পথচারীরা দেখে ফেলায় ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ব্যাংকের গার্ডকে জানায়। এসময় গার্ডের চিৎকারে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলে সুড়ঙ্গ তৈরির সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত খুনতি, বেলচা, দা, ছেনি, সাবল, হাতুড়ি ও করাতসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের রাজশাহী অবস্থানকালে সংঘটিত এ ঘটনায় ব্যাংকপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সময় গভর্নর নগরীর একটি রেস্তোরায় রাজশাহী অঞ্চলের রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের বিষয়ে একটি কর্মশালায় বক্তব্য রাখছিলেন। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা ব্যাংকটিতে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা হলেও শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত জড়িতদের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘ব্যাংক ভবনের পেছনে ভল্টের দেয়ালের নিচে সুড়ঙ্গ করছিল দুর্বৃত্তরা। এসময় একজন পথচারী পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ শুনে প্রাচীরের ওপর দিয়ে উঁকি দেন। তিনি বিষয়টি তাৎক্ষণিক ব্যাংকের গার্ডকে জানান। এসময় গার্ড ঘটনাস্থলে এসে চিৎকার শুরু করলে দুর্বৃত্তরা সুরঙ্গ তৈরির সরঞ্জাম ফেলেই পালিয়ে যায়। তবে দুর্বৃত্তরা প্রায় আড়াই ফুট গভীর সুড়ঙ্গ তৈরি করে ফেলেছিল। যেখানে সুরঙ্গ কাটা হয়েছিল তা ব্যাংকের টাকা রাখার ভল্টরুমের কাছেই বলেও জানান ওসি। ওসি আরো জানান, শুক্র ও শনিবার দুইদিন ছুটি ছিল। সেই চিন্তা করেই হয়তো দুর্বৃত্তরা বৃহস্পতিবার রাতেই সুরঙ্গ তৈরির কাজ শুরু করেছিল। এ ঘটনা কেউ টের না পেলে আগামী রবিবার ব্যাংক খোলার আগেই দুর্বৃত্তরা ভল্টরুম পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বড় কোনো সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকতে পারে। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কোর্ট বাজারে সোনালী ব্যাংক কোর্ট শাখার ভবনটি রাস্তার পাশে হলেও প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এ কারণে ভেতরে কী হচ্ছে, তা বাইরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও পথচারীদের চোখে পড়ে না। সুরঙ্গ তৈরির খবর পেয়ে রাতেই মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) তানভির হায়দার চৌধুরী ও সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি বলেন, সুরঙ্গ কেটে ডাকাতির চেষ্টার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এসময় ঘটনাস্থলে ছুটে যান রাজশাহী র্যাবের একটি টহল দল। এদিকে ঘটনাস্থলের দুইশ’ গজের মধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ডিবি গোয়েন্দা) পুলিশের অফিস। এমন সুরক্ষিত এলাকায় অপরাধীরা কীভাবে ব্যাংকের ভল্টরুমের টাকা লুটের এমন সাহস দেখাতে পরে তা নিয়ে নগরীতে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষ্যদর্শী পথচারী নগরীর কোর্ট বুলনপুর এলাকার মৃত আবুল হোসেন সরকারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, এশার নামাজ আদায় শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রাচীর ও ভল্ট ঘরের মাঝের ফাঁকা জায়গা থেকে খোঁড়াখুড়ির শব্দ পাওয়া যায়। তখন প্রাচীরে উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন কে বা কারা মাটি খুঁড়ে সিমেন্টের দেয়ালে সুড়ঙ্গ তৈরি করছে। তিনি বিষয়টি দ্রুত ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডকে জানান। কিন্তু গার্ড অস্ত্র ছাড়াই ঘটনাস্থলে গিয়ে চিৎকার শুরু করেন। এসময় জড়িতরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের ডেকে বিষয়টি দেখানো হয় এবং রাজপাড়া থানা পুলিশকে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকে সুড়ঙ্গ কেটে ১৬ কোটি টাকা লুট হয়। এরপর গত মার্চে বগুড়ার আদমদীঘিতে একইভাবে সুড়ঙ্গ কেটে রাষ্ট্রায়াত্ত এই ব্যাংকের স্থানীয় শাখার ৩০ লাখ টাকা লুট হয়। তারপর গত সেপ্টেম্বরে জয়পুরহাটে ব্র্যাক ব্যাংকের দেয়াল ভেঙে চুরি যায় প্রায় ২ কোটি টাকা। post by ashiqur rahman swadeshnews24.com